যেভাবে আল্লাহ’কে ভালোবাসবো।

 





যেখানে
 ভয়  আনুগত্য আছেসেখানে ভালোবাসা থাকতে পারেআবার না- থাকতে পারে কিন্তু যেখানে ভালোবাসা আছেসেখানে অবশ্যই ভয়  আনুগত্য থাকবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে  সব লোকযারা ইমান এনেছআল্লাহকে তেমনি ভয় করোযেমন ভয় করা উচিত আর মুসলিম অবস্থায় ছাড়া যেন তোমাদের মৃত্যু না হয়’ (সুরা আল-ইমরান-১০২) আয়াতে আল্লাহ তাআলাকে পূর্ণরূপে ভয় করার অর্থ এই যেতার আনুগত্য করবেঅবাধ্য হওয়া যাবে নাতাকে সর্বদা স্মরণ করবেকোনো সময়েই তাকে ভুলে যাওয়া চলবে না তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবেকৃতঘ্ন হওয়া যাবে না অতঃপর আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছেতোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ কোরো না অর্থাত্আজীবন ইসলামের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকোযাতে মৃত্যুও এর ওপরই হয় মহান প্রভুর নিয়ম এই যেমানুষ স্বীয় জীবন যেভাবে পরিচালনা করেসেভাবেই মহান প্রভু তার মৃত্যু দিয়ে থাকেন যার ওপর মৃত্যু সংঘটিত হবেতার ওপরই কেয়ামতের দিন তাকে উত্থিত করবেন আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা,আমর নাকিদযুহায়র ইবনু হারব,মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র  ইবনু আবূ উমর (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃথেকে বর্ণিত তিনি বলেনএক ব্যক্তি বললইয়া রাসুলাল্লাহকিয়ামত কবে (সংঘটিত হবে)? তিঁনি বললেনঃ তুমি তার জন্য কি সঞ্চয় করেছতখন সে বেশী কিছু উল্লেখ করতে পারল নাতিনি বলেনকিন্তু সে বলল,আমি আল্লাহ  তাঁর রাসুলকে ভালবাসিতিঁনি বললেন,তুমি তার সঙ্গেই (উঠবেযাকে তুমি ভালবাস মুহাম্মাদ ইবনু রাফি  আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃথেকে বর্ণিত তিনি বলেনজনৈক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এল ...... এরপর তার অনুরূপ (বর্ণিত) তবে এই বর্ণনায় এতটুকু পার্থক্য রয়েছেঃ বেদুঈনটি বললআমি কিয়ামতের জন্য বড় ধরণের কিছু (সম্বলযোগাড় করিনিযার উপর আত্মপ্রসাদ লাভ করতে পারি (সহিহ মুসলিম৬৪৭১ইবনে মাসঊদ (রাঃথেকে বর্ণিতঃএক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকটে এসে জিজ্ঞাসা করল, “হে আল্লাহর নবীসেই ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কীযে ব্যক্তি কোন এক সম্প্রদায়কে ভালবাসে অথচ সে তাদের মত আমল করতে পারে না?” উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামবললেন, “যে যাকে ভালবাসে সে তার সঙ্গী হবে” (বুখারী ৬১৬৯-৬১৭০মুসলিম ৬৮৮৮নং)

 

আলোচ্য হাদিস থেকে স্পষ্ট যেযে যাকে ভালোবাসবে সে কেয়ামতে  তার সাথেই থাকবেএখানে ভালোবাসার নিহিতার্থ বুঝানো হয়েছেমানুষ মানুষকে ভালোবাসবেসর্বদা ধর্ম,বর্ণ,জাতি,গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের কল্যাণ কামনা করবে , ইহা মানবিকতার উদাহরণমানুষ সবাইকে ভালোবাসলেও সবার দেখানো পথে অগ্রসর হয় নাশুধুমাত্র তাদের দেখানো পথে চলে যাদের অনেক অনেক বেশি ভালোবাসে এবং বিশ্বাস করেতাই কোনো মুসলিম নিজ ধর্মের ব্যক্তি থেকে অন্য ধর্মের ব্যক্তিকে অধিক ভালোবাসবে না মানব জাতি অনুকরণপ্রিয় যে যাকে অধিক ভালোবাসে তার নীতিআদর্শ অনুসরণ করে  তা জীবনে বাস্তবায়ন করে সে জন্য কিয়ামতের দিনেও সে তার বন্ধু হবে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা রসূলের অনুসরণ করেন তারা (কিয়ামতের দিনতাদের সাথে থাকবে যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ (নিআমাতদান করেছেন’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা  : ৬৯)

 

যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে অথচ তার বিধানকে মেনে নেয়নি সে ব্যক্তির ইমান  ভালোবাসা প্রশ্নবিদ্ধ  বর্তমানেতো অমুসলিমদের পথ  পন্থাকে আন্তরিক ভাবে গ্রহণ করা মুসলমানদের নৈমিত্তিক ব্যাপার সভ্যতার নাম দিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে লালন করা হয়ে থাকে পৈত্রিক সূত্রে ইমান লাভ হলেইতো আর ইমানকে জীবন বিধানরূপে নেয়া যায় না মৌলিক বিশ্বাস,চরিত্র  কর্ম যাদেরটা আমরা গ্রহণ করবো ,  আমরাতো তাদেরই নিকটবর্তী হবো

মানুষ যে সকল মনীষীদের প্রতি সম্মান,শ্রদ্ধা   ভালোবাসা স্থাপন করে  সেটা মূলত তাদের প্রতি বিশেষ দুর্বলতার হেতু থেকেই করেএই দুর্বলতার মূল হেতু হলো তাদের শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ,আস্থা  বিশ্বাস স্থাপনজ্ঞান গবেষণার তত্ত্ব  তাদের সঙ্গ গ্রহণকেউ যদি নিজেকে মুসলিম দাবি করেও অমুসলিম কবি,দার্শনিক,গবেষক,সাহিত্যিক,বিজ্ঞানী  নেতাদের প্রতি গভীর ভালোবাসায় লিপ্ত থাকে তাহলে তার কাছে কুরআন  সুন্নাহর ভালোবাসা পূর্ণ মাত্রায় কতটুকু থাকা সম্ভব ? এনিয়ে মতভেদ থাকলেও সবাই একমত যেযদি অমুসলিমদের ভালোবাসা কারো অন্তরের বিশ্বাসে প্রভাবিত করে তাহলে তার ইমানের দাবী প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যায়

মূলকথা হলো মানুষ হিসেবে অমুসলিমদের সাথে চলাফেরা,ব্যবসা-বাণিজ্য,বসবাস,লেনদেন করা এক বিষয় আর তাদের নীতি আদর্শ অনুসরণ করাতাদের দর্শনকে বরণ করাতাদের বিশ্বাসের প্রতি দূর্বলতা প্রকাশ করা আলাদা বিষয় মুসলিম সর্বদা আল্লাহর বিধান  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসতে হবে এবং ইসলামী রীতি অনুযায়ী নিজেকে পরিচালনার পূর্ণ চেষ্টা চালাতে হবে

মানুষ নানা কারণে একে অপরকে ভয় করে চোর পুলিশকে ভয় করে মার খাওয়ার আতঙ্কেচাকর মালিককে ভয় করে অতিরিক্ত কাজ  পারিশ্রমিক যথাযথ না পাওয়ার ভয়েপথিক ঠগবাজদের ভয় করে হাতের থলে লুট হবে বলে এখানে মুমিন ব্যক্তিরাও কি তেমন কোনো কারণে আল্লাহকে ভয় করবেএকদমই নাবরং মুমিনগণ আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ  বান্দার মধ্যকার ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন হওয়ার ভয়ে মাবুদ  তার বান্দার মধ্যে বিশেষ চুক্তি রয়েছেযে চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে মাবুদ  বান্দার ভালোবাসার পরিপূর্ণতা পায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান  মাল এই মূল্যে যেতাদের জন্য রয়েছে জান্নাত তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঅতঃপর মারে  মরে তওরাতইঞ্জিল  কোরআনে তিনি  সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিকসুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সেই লেনদেনের ওপরযা তোমরা করছ তার সঙ্গে আর  হলো মহান সাফল্য’ (সুরা তাওবাহ-১১১মুমিনদের জান্নাত লাভের জন্য মাবুদের সঙ্গে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করতে হবে কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিশ্বাস স্থাপন-পূর্বক ইমান আনয়ন করে মুমিন হয় অতঃপর মুমিনগণ আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করার লক্ষ্যে নিজের অভিলাষ বিসর্জন দিয়ে মাবুদের দরবারে আত্মসমর্পণ করে শরয়ী বিধান পালনপূর্বক মুসলমান হতে হয় কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহকে ভয় করেই ইবাদত করেতাহলে তার ইবাদত হবে গতানুগতিক ধারার আদেশ পালনের ইবাদাতকিন্তু কেউ যদি মাবুদের ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ ইবাদত করেতবে তার ইবাদতে থাকবে একাগ্রতাআন্তরিকতানিষ্ঠা কোনো ব্যক্তি একাগ্রতার সঙ্গে ইবাদত না করলে কখনো তার ইবাদত কবুল হবে না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি  কিতাব হকসহ আপনার প্রতি নাযিল করেছি কাজেই দিনকে আল্লাহরই জন্য খালিস করে শুধু তারই দাসত্ব করতে থাকুন’ (সুরা যুমার-০২) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা কোরআনের সুরা ফাতেহার প্রথম আয়াতে বলেন, ‘সমস্ত প্রসংশা মহান আল্লাহর জন্যযিনি সারা জাহানের রব’ অতঃপর দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যিনি মেহেরবান দয়াময়’ এখানে প্রথম আয়াতে মহান রবের বড়ত্ব প্রকাশে মানুষ যেহেতু ভয় না পায়সেজন্য সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিতীয় আয়াতে মহান রবের দয়ার কথা বলেছেন যাতে মানুষ আল্লাহকে ভয় করার পাশাপাশি তার দয়ার কথা স্মরণপূর্বক তাকে ভালোবাসতে পারে

 

সৃষ্টিকুল কায়েনাত ভালোবাসার ফল হাদিসে কুদসিতে রয়েছেরসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি ছিলাম গোপন ভান্ডারভালোবাসলাম প্রকাশ হতেতাই সৃজন করলাম সমুদয় সৃষ্টি’ আল্লাহর কুদরতের জগতে ভালোবাসাই হলো প্রথম সম্পাদিত ক্রিয়া বা কর্ম এই ভালোবাসা পবিত্র কোরআনে সাতটি পর্বে ৬৩ বার উল্লেখ হয়েছে আল্লাহকে ভালোবাসার জন্য রসুলুল্লাহ ()-এর অনুসরণ করতে হবে ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসোতবে আমার নবি ()-এর অনুসরণ করোতাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ মার্জনা করবেন আবার নবিজি (বলেন :‘সর্বোত্তম আমল হলো আল্লাহর জন্য ভালোবাসা’ (আবু দাউদ শরিফ)

 

কীভাবে ধারণা করবোআল্লাহ তায়ালা আমার ভালোবাসায় সন্তুষ্ট কিনাযারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে মরিয়াতাদের প্রায় সবারই এটি এক সাধারণ প্রশ্ন যেহেতু আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা একটি বিমূর্ত বিষয়তাই নিশ্চিত করে কখনোই বলা যাবে না যেআল্লাহ তায়ালা তার নির্দিষ্ট কোন কোন বান্দাকে ভালোবাসেন তবে কিছু নিদর্শনের মাধ্যমে কারো প্রতি আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার মাপকাঠি নির্ধারণ করা যায়

 আল্লাহর জিকির তথা স্মরণ

 আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি বান্দার ভালোবাসার  অন্যতম নিদর্শন হলো জিকির তথা আল্লাহর স্বরণ জিকির অনেক ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমার আমার জিকির (স্মরণকরআমি তোমাদের জিকির (স্মরণকরব’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২ ) আয়াতের ব্যাখ্যায় দেখা যায়, ‘জিকির বলতে সব ইবাদত  আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজকে বুঝানো হয়েছে আল্লাহর কথা মেনে নেয়াই বান্দার পক্ষ থেকে তা জিকির হিসেবে সাব্যস্ত আর জিকিরের প্রতিদানে বান্দাকে করুণাশান্তিবরকত  পুরস্কার প্রদানই হচ্ছে আল্লাহর জিকির বা স্মরণ প্রখ্যাত নারী সাহাবি হজরত উম্মে দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহা জিকির সম্পর্কে বলেন-‘তুমি যদি নামাজ আদায় কর তাও আল্লাহর জিকিরতুমি যদি রোজা পালন কর তাও আল্লাহ জিকিরতুমি যা কিছু ভালো কাজ কর তাও আল্লাহর জিকির যত মন্দ কাজ পরিহার করবে সবই আল্লাহর জিকিরের অন্তর্ভূক্ত তবে সবচেয়ে উত্তম জিকিরআল্লাহর তাসবিহ ‘সুবহানাল্লাহ’ (سُبْحَانَ اللهবলা

 

 ইমাম তাবারি জিকিরের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘হে মুমিনগণআমি তোমাদেরকে যে সব আদেশ দিয়েছি তা মেনে চল এবং যা নিষেধ করেছি তা থেকে বিরত থাক তোমরা আমার আনুগত্যের মাধ্যমে জিকির করলে রহমতদয়া  ক্ষমা প্রদানের মাধ্যমে আমি তোমাদের জিকির করব’ তাবেয়ি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে রবিয়া জিকির সম্পর্কে হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আল্লাহর জিকিরতাঁর তাসবিহ-তাহলিলপ্রশংসা জ্ঞাপন করাকুরআন তেলাওয়াত করাআল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তাঁর কথা স্মরণে তা থেকে বিরত থাকা সবই কি আল্লাহর জিকিরহজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘নামাজরোজা ইত্যাদি সবই আল্লাহর জিকির

তাবেয়ি হজরত সাঈদ ইবনে জুবাইর রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-‘আল্লাহর আনুগত্যই তার জিকির যে তাঁর আনুগত্য করলসে জিকির করল আর যে আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য করল না বা তাঁর বিধি নিষেধ পালন করল নাসে যত বেশিই তাসবিহ পাঠ করুক আর কুরআন তেলাওয়াত করুকসে আল্লাহর জিকিরকারী হিসেবে গণ্য হবে না

 

আজকের বিশ্বে প্রযুক্তি যুগে সর্বত্রই মুসলমানদের মুখে সুবহানাল্লাহআলহামদুলিল্লাহমাশাআল্লাহইন্নালিল্লাহ ইত্যাদি মৌখিক জিকিরের প্রচলন দেখি ইহা মুসলিম উম্মাহর জন্য বেশ আশার দিক বটেকিন্তু অনেকাংশে সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দেখা যায় যেমন , ’’আলহামদুলিল্লাহ আমার মেয়ে চলচিত্র নাট্য প্রতিযোগীতায় প্রথম হয়েছেতার জন্য দোয়া করবেন” সেই পোস্টে মন্তব্য করা হয়মাশাআল্লাহ আপু আপনার মেয়ে বেশ সুন্দর ড্যান্স করেতার জন্য দোয়া রইলো আবার দেখা যায় যুবক-যুবতী একে অপরের ইনবক্সে নক করে আসসালামু আলাইকুম বলে একে অপরের ভালোর খবরে আলহামদুলিল্লাহ বলে থাকেএইতো যেন স্বামী-স্ত্রীর মধুর স্বর্গীয় আলাপ আসলে এজাতীয় জিকির গুলো আমল নয় বরং আজকের প্রজন্মের ফ্যাশন মাত্র আসলে যদি কেউ কর্মে আল্লাহর বিধান মেনে না চলে তবে তাদের মুখের তাসবিহ-তাহলিল  কুরআন তেলাওয়াতের কোনো মূল্য নেই কাজে-কর্মে কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত পন্থা অবলম্বন করাই হল সত্যিকার আল্লাহ তায়ালার স্বরণআর যখন কাজে কর্মে  মননে আল্লাহর স্বরণ জাগবে তখনই বুঝতে হবে আমি আসলেই আল্লাহকে ভালোবাসতে পেরেছি এবং তিনিও আমাকে ভালোবাসেন

আল্লাহর বিধান মানা :

 

কলকারখানায় শ্রমিক যেমন মালিকের কথা মত কাজ করেব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার যেমন তার মালিকের নির্দেশিত পথে গাড়ি চালায়রাজ মিস্ত্রী যেমন তার মালিকের কথা মত ইমারত বানায়,আর এর ব্যতিক্রম ঘটলে যেমন তাদের চাকুরি থাকেনা  ঠিক তেমনই বান্দাকে আল্লাহর নির্দেশিত বিধান মেনে চলতে হয়আর যখন বান্দা আল্লাহর বিধানের তোয়াক্কা না করে নিজের মত মানুষ্য বিধানের আনুগত্য করে তখন আল্লাহ তার সে বান্দাকে ভালো না বেসে তিরস্কার করেন এবং বান্দার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকেন আল্লাহর বিধান মেনে চলা প্রতিটা বান্দার জন্য আবশ্যকীয় বিধান আজকালকার মুসলমানেরা স্রষ্টার বিধানকে বাদ দিয়ে নিজেরা নিজেদের মত করে বিধান জারি করেছে এমনকি শতকরা আশি-নব্বই জনের মুসলমানের দেশেও আল্লাহর বিধানের তোয়াক্কা করা হয়না বরং অপ্রতিরোধ্য গতিতে আল্লাহর বিধানের সাংঘর্ষিক আইন প্রণয়ন করতঃ তা সাধারণ মুসলমানদের মানতে বাধ্য করা হচ্ছে আল্লাহ বলেন, “তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের আলিম  ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারইয়ামের পুত্র মাসীহকেও অথচ তাদের প্রতি শুধু  আদেশ দেওয়া হয়েছে যেতারা শুধুমাত্র এক মাবূদের ইবাদাত করবেযিনি ব্যতীত মাবূদ হওয়ার যোগ্য কেউ নয় তিনি তাদের অংশী স্থাপন করা হতে পবিত্র” [সূরা আত-তাওবাহআয়াত৩১এখানে আল্লাহ তায়ালা ইয়াহূদী-নাসারাদের ধর্ম-যাজকদেরকে রব হিসেবে নাম করণ করেছেন কারণতারাও আল্লাহর বিধানের মত বিধান রচনা করত তাদের রচিত বিধানের অনুসারীদেরকে গোলাম বা বান্দা হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে কারণতারা আল্লাহর বিধানের বিরোধীতা করে  সব পাদ্রি  আলিমদের কাছে নতি স্বীকার করত এবং তাদের অনুসরণ করত আদী ইবন হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেনতারা তো তাদের ইবাদাত করে না নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনতারা হালালকে হারাম করে এবং হারামকে হালাল করে আর সাধারণ লোকেরা তাদের অনুসরণ করে থাকে

 যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে নাবরং অন্যের বিধান দ্বারা বিচার-ফায়সালা করতে চায়তাদের ব্যাপারে কুরআনের আয়াতগুলো দুভাগে বিভক্ত প্রথম প্রকারের আয়াতে তাদেরকে ঈমানহীন (মুনাফিকদ্বিতীয় প্রকারের আয়াতে কাফিরযালেম  ফাসিক বলা হয়েছে

 

প্রথম প্রকারের আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আপনি কি তাদেরকে দেখেন নিযারা দাবী করে যেআপনার প্রতি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তারা সে সমস্ত বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে তারা বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানের জন্য শয়তানের কাছে নিয়ে যেতে চায়অথচ তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছেযাতে তারা ওকে মান্য না করে পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায় আর যখন আপনি তাদেরকে বলবেনতোমরা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং তাঁর রাসূলের দিকে এসো তখন আপনি মুনাফিকদিগকে দেখবেনওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যাচ্ছে এমতাবস্থায় যদি তাদের কৃতকর্মের দরুন বিপদ আরোপিত হয়তখন কেমন হবেঅতঃপর তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে ফিরে আসবে যেকল্যাণ  সমঝোতা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না এরা হলো সে সমস্ত লোকযাদের মনের গোপন বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অবগত অতএবআপনি ওদেরকে উপেক্ষা করুন এবং ওদেরকে সদুপদেশ দিয়ে এমন কোনো কথা বলুনযা তাদের জন্য কল্যাণকর বস্তুতঃ আমি একমাত্র  উদ্দেশ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছিযাতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী তাদের (রাসূলগণেরআদেশ-নিষেধ মান্য করা হয় আর সেসব লোক যখন নিজেদের অনিষ্ট সাধন করেছিলতখন যদি আপনার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং রাসূলও যদি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেনঅবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারীমেহেরবান রূপে পেত অতএবতোমার রবর কসমসে লোক ঈমানদার হবে নাযতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে অতঃপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবূল করে নিবে” [সূরা আন-নিসাআয়াত৬০-৬৫]

 

দ্বিতীয় প্রকারের আয়াতসমূহে আল্লাহ বলেন,“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে নাতারা কাফির” [সূরা আল-মায়েদাআয়াত৪৪]“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে নাতারা যালেম” [সূরা আল-মায়েদাআয়াত৪৫] “যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার করে নাতারা ফাসিক” [সূরা আল-মায়েদাআয়াত৪৭]

যারা আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করে না তাদেরকে আল্লাহ উপরের তিনিটি আয়াতে পরপর কাফিরযালেম এবং ফাসিক বলেছেন তিনটি গুণই কি এক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারেঅর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করল নাসে কাফিরফাসিক এবং যালেমও বটে কেননা আল্লাহ কাফিরদেরকে যালেম এবং ফাসিক হিসেবেও বর্ণনা করেছেন ইসলাম মুখে প্রকাশ করার মধ্যে ক্ষান্ত থাকার ধর্ম নয় বরং ইসলাম হলো বিধান জানার  তদনুযায়ী জীবন পরিচালনার ধর্ম

কুরআন হল আল্লাহ তায়ালার বাণী মানুষ যখন কুরআন তিলাওয়াত করেতখন সে প্রকারান্তরে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কথা বলেকেউ যখন কুরআনের বিধান মেনে চলে তখন সে আল্লাহর বিধান মেনে চলে কেউ যদি বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতে  কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়তাহলে বুঝতে হবেওই বান্দাকে আল্লাহ তা'য়ালা ভালোবাসেন

 

 .আল্লাহর জন্য রাত্রি জাগরণ করা :

 

আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো শেষ রাতের কিয়াম তথা তাহাজ্জুদ হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী ফরজ নামাজের পর রাতের (তাহাজ্জুদনামাজ সর্বোত্তম ইবাদত শয়তানের আক্রমণেও কার্যকরী আমল এটি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হয় শয়তানের যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্তি পায় মুমিন মুসলমান হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন শয়তান তার মাথার শেষাংশে (ঘাড়েতিনটি গিট মেরে দেয় প্রত্যেক গিট দেয়ার সময়  মন্ত্র পড়ে মুমিন বান্দাকে অভিভূত করে দেয় যেতোমার এখনো লম্বা রাত বাকিঅতএব ঘুমাতে থাকো সুতরাং ওই ব্যক্তি যদি ঘুম থেকে জেগে ওঠে আল্লাহর জিকির করে তবে (শয়তানের দেয়া গিটেরএকটি বাঁধন খুলে যায় তারপর ওজু করলে আরেকটি বাঁধন খুলে যায় অতঃপর তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তার সবগুলো বাঁধনই খুলে যায় ফলে ভোর বেলা ফজরের সময় সে উদ্যম  স্বতস্ফুর্তভাবে জেগে ওঠে অন্যথায় (তাহাজ্জুদ না পড়লেআলস্যভরা ভারী মন নিয়ে ফজরের সময় জেগে ওঠে (মুয়াত্তা মালেকবুখারিমুসলিমআবু দাউদনাসাঈইবনু মাজাহ)

 

যাঁরা ইবাদতের নিমিত্ত নিদ্রা  শয্যা ত্যাগ করে রাত্রিজাগরণ করেতাঁরা নিশ্চয় আল্লাহর প্রিয় বান্দা শেষ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ সকল রাতের নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল  নামাজ মুমিনের মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করে সারা দিন তারা ইলম অর্জন-বিতরণদাওয়াত-তাবলিগ  আপন কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে এবং নৈশপ্রহরে আল্লাহর নৈকট্য  সান্নিধ্য লাভে ব্রতী হয় অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে পৃথক থাকে তারা তাদের পালনকর্তাকে আশা  আশঙ্কায় ডেকে থাকে ’ (সুরা সিজদা-১৬)  আল্লাহর নিষ্ঠাবান বান্দারা রাতে বিছানা ত্যাগ করে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন হয় প্রভুর করুণা  পুণ্য লাভের আশায় তারা নামাজ-জিকির এবং ইস্তেগফারে ব্যাকুল হয়  আত্মসমাহিত হয়  আল্লাহর অপার মেহেরবানি যে যারা এশা  ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করবে তাঁদেরও তিনি ‘ইবাদতের নিমিত্ত রাত্রিজাগরণকারী’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করবেন হজরত উসমান (রা.) বলেন, ‘যে এশার নামাজ জামাতে পড়েসে অর্ধরাত্রি এবং যে ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়েসে বাকি অর্ধরাত্রি ইবাদত করার সওয়াব পায় ’ (আবু দাউদহজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি শোয়া  বসাবস্থায় অথবা পার্শ্বদেশ পরিবর্তন করা অবস্থায় আল্লাহ তাআলার জিকির করেসেও উপর্যুক্ত আয়াতের আওতায় পড়বে ' শেষ রাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা শেষ আসমানে এসে বান্দার ডাকের অপেক্ষায় থাকেন বান্দা আল্লাহকে ডাকার সাথে সাথেই তিনি ডাকে সাড়া দেনসুতরাং যখন বান্দা নিয়মিত আল্লাহর দরবারে শেষ রাতের নামাজে দাড়াতে পারবে তথন বুঝতে হবে নিশ্চয়ই সে ব্যক্তিটি আল্লাহকে একাগ্রতার সহিত হৃদয়ের গহীণ থেকে ভালোবাসতে পেরেছে এবং আল্লাহও তার প্রতি সন্তুষ্ট

 

 

ইবাদাতে একাগ্রতা  স্বাদ গ্রহণ :

 

এটি বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন একাগ্রতা   আত্ম-পরিতৃপ্তি ছাড়া ইবাদত মূল্যহীন ইবাদতে একাগ্রতা  পরিতৃপ্তির জন্য আল্লাহ  তাঁর রাসুলের অভিপ্রায়ের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে ঈমান-ইবাদতে পরিতৃপ্তির উপাদান প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তিনটি জিনিস যার মধ্যে আছেসে- ঈমানের স্বাদ পেয়েছেযার কাছে আল্লাহ  তাঁর রাসুল সব কিছু থেকে প্রিয়তর যে ব্যক্তি কাউকে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর মুসলিম ভাইকে ভালোবাসে যে কুফরিতে ফিরে যাওয়া তেমন অপছন্দ করেযেমন সে জাহান্নামি হওয়াকে অপছন্দ করে ’ (বুখারিমুসলিম শরিফের বর্ণনায় হাদিসে ‘ঈমানের স্বাদের’ ব্যাখ্যায় ইমাম নববি (রহ.) বলেন ‘ঈমানের স্বাদ হলো আল্লাহর আনুগত্যের স্বাদ পাওয়াআল্লাহ  তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য কষ্ট সহ্য করা এবং পার্থিব জীবনে আল্লাহ  তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া ’  ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) ইবাদতে আত্মতৃপ্তি প্রসঙ্গে বলেনযখন কেউ দেখে তার অন্তর প্রশান্ত-প্রশস্ত হচ্ছে নাঈমানের স্বাদ সে অনুভব করছে নাহিদায়াতের জ্যোতি খুঁজে পাচ্ছে নাতখন সে যেন বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করে এবং তা লাভের সব পথ  উপায় অবলম্বন করে কেননা মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে আমার পথে সচেষ্ট হয় আমি তার জন্য আমার পথগুলো উন্মুক্ত করে দিই ’ (সুরা : আনকাবুতআয়াত : ৬৯)  মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলে তুমি তাকে সামনে পাবেস্বাচ্ছ্যন্দকালেও তুমি তাকে স্মরণ করোতাহলে দুঃসময়েও তিনি তোমাকে মনে রাখবেন আর জেনে রাখতুমি যা হারিয়েছ বা যা তুমি লাভ করতে পার নাই তা তোমার জন্য ছিল না আর যা তুমি পেয়ে গিয়েছ তা তোমারইপ্রাপ্তির বাইরে তা থাকতে পারে নাকেননাঅবধারিত নিয়তির লিখন এটাই ছিল বুঝে নাও আল্লাহতায়ালার সাহায্য ধৈর্য্যধারণকারীদের সাথে থাকে সুখ-আনন্দ উদ্বেগ উৎকন্ঠার সাথেহাসি-আনন্দ দুঃখ-বেদনার সাথে একীভূত হয়ে থাকে আর প্রত্যেক অভাব-অনটনের পর রয়েছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ’ (সুনান তিরমিজি) যারা সর্বাবস্থায় ধৈর্য্যধারণ করেন আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর ভরসা রাখেন তাদের সাথেই আল্লাহ থাকেনকেননা এমন ব্যক্তিদেরকেই তিনি ভালোবাসেন  ইবাদতে একাগ্রতা আনয়নের জন্য মুমিন বান্দাকে ইবাদতের মর্ম বুঝে ইবাদত করতে হয় নামাজের ক্ষেত্রে কুরআন তিলাওয়াতের সময় অর্থ  মর্মার্থ অনুধাবন করতে হয় এবং  সকল দোয়া সমূহ পাঠের ক্ষেত্রে এমন মনোনিবেশ করতে হয় যেন তিনি স্বয়ং আল্লাহর সামনে দাড়িয়ে নামাজ পড়ছেন তবেই ইবাদতে একাগ্রতা সৃষ্টি হবে আর একাগ্রতা সৃষ্টি হলেই ইবাদতের স্বাদ আস্বাদন করা হয় সুতরাং ইবাদাতে যদি মজা পাওয়া যায়তাহলে বুঝতে হবে আল্লাহ তায়ালা সংশ্লিষ্ট বান্দাকে ভালোবাসেন কারণ আল্লাহ তা'য়ালার ভালোবাসাই তার হৃদয়ে ইবাদাতের তৃষ্ণা সৃষ্টি করছে

 

হৃদয় যদি কুকর্ম সাধনে বাধা দেয়:

 

বান্দার জন্য আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসার একটি উত্তম নিদর্শন হলো স্বয়ং নিজ আত্মা কর্তৃক কুকর্মে বাধা সৃষ্টি হওয়া  আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা যদি কোনো খারাপ কাজে লিপ্ত হতে উদ্যত হয়তার হৃদয় তাকে বাধা দেয় পরকালে খারাপ কাজের জন্য হিসাবের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে পৃথিবীতেই তার হৃদয় তাকে হিসাবের সম্মুখীন করেসে ভাবেক্ষণকালের জীবন!প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি বলে যা বুঝি সবই সময়ের রঙ্গমঞ্চসময় চলে যাবে আমরাও চলে যাবদিন শেষে কি রেখে যাচ্ছি সেটা বড় কথা নয় বরং কি নিয়ে অনন্তকালের যাত্রী হচ্ছি সেটাই বড়কাল কিয়ামতের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির খেলাই সবচেয়ে বড় খেলাশয়তান খারাপ কাজগুলোকে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করেযেমনটি আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, ‘শয়তান তাদের কুকর্মসমূহকে তাদের সামনে সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করেছে (সূরা নাহল৬৩তবে আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয়ভাজনদেরকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করেন আরশের ছায়ার নিচে যে সাত শ্রেণির লোক স্থান পাবে তাদের মধ্যে এক শ্রেণি হলো এমনযে ব্যক্তিকে কোন সম্ভ্রান্ত বংশের সুন্দরী নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আহবান জানায় আর  ব্যক্তি শুধু আল্লাহর ভয়েই বিরত থাকে নারনী পুরুষ একে  অপরের প্রতি জৈবিক চাহিদা হলো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিআল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থাভালোবাসা  ভয় না থাকলে এমন কুকর্ম থেকে বেঁচে থাকা অসম্ভব যখন আমাদের পক্ষে সকল প্রকার কুকর্ম থেকে বেঁচে থাকার প্রবণতা সৃষ্টি হবো তখন বুঝবো নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভালোবাসায় সন্তুষ্ট আছেন

 

হৃদয়ে আল্লাহ তায়ালার ভয় থাকা:

তাকওয়া হলো আল্লাহর ভালোবাসা হারানোর ভয় একজন প্রকৃত মুমিন তাকওয়া দ্বারাই পরিচালিত হন তাকওয়া মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে এবং সৎকাজে অনুপ্রাণিত করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ইমান আনল এবং তাকওয়া লাভ করলতারা আল্লাহর বন্ধুতাদের কোনো ভয় নেইতারা চিন্তিতও হবে না’ (সুরা ইউনুসআয়াত৬২) তাকওয়ার মূল কথা হলো আল্লাহর প্রেম  ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে সদা ভীত  সতর্ক থাকানবীজি (সা.)–এর সুন্নাত পালনের মাধ্যমে আল্লাহর মহব্বত লাভের আশায় সদা সচেষ্টউৎকণ্ঠিত  উদ্গ্রীব থাকা যতই ভালো কাজ করা হোক না কেনআল্লাহ তা'য়ালার প্রিয় বান্দাদের হৃদয় সর্বদা আল্লাহ তায়ালার ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে কারণ ভালো কাজগুলো আল্লাহ তা'য়ালা কবুল করে নিয়েছেন কিনা কারো পক্ষেই তার নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয় তবে হৃদয়কে পরিশোধিত করে আল্লাহ তা'য়ালার ভয়  রহমতের আশায় সম্পাদিত ভালো কাজগুলো কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে আল্লাহ তায়ালার প্রিয়ভাজন হতে পারা পরম সৌভাগ্যের তবে আল্লাহ তা'য়ালার ভালোবাসা তাঁর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হয়

 

পরিশেষেরাসুলুল্লাহ (প্রায়ই এই দোয়া করতেন যে, ‘হে আল্লাহআপনার ভালোবাসা চাইআপনার ভালোবাসার জন্য ভালোবাসা চাইআর সেই আমল করার তৌফিক চাইযে আমল করলে আপনার ভালোবাসা লাভ করা যায়’ (মুআত্তা ইমাম মালিক) সুতরাং আল্লাহকে ভয় করার চেয়েও ভালোবাসা জরুরি কোনো ব্যক্তি আল্লাহকে ভালোবাসলে আল্লাহ তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন



লেখক,

মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা
প্রাবন্ধিক  কলামিস্ট
ইমেইল-tohaarafat1998@gmail.com
মোবাইল-01781704368

Comments