আচমকা সাক্ষাৎকার




রুদ্র বিশেষ কাজে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা করে শহরমুখী বাসে উঠলো।স্বভাবগত কারণেই বাসের বাম পাশে জানালার সাথে বাছাই করলো নিজের আসন। চলন্ত বাসে দক্ষিণা বাতাস করছে উপভোগ। হঠাৎ গাড়ি ব্রেক কষলে সামনে তাকিয়ে দেখে স্পীড ব্রেকার। যার কারণেই মূলত হঠাৎ ব্রেক। যে ব্রেকটাই হয়ত একটি আচমকা সাক্ষাৎকারের ভিত্তি। গাড়ি ব্রেক করার সময় রাস্তা দেখলো পাশ দিয়ে এক সুন্দরী রমনী হেঁটে যাচ্ছে।

রমনীকে দেখেই মন বলে উঠলোঃ হায় আল্লাহ! এতো সুন্দর মেয়ে হয়! এতো স্বর্গীয় রমণী।

একদেখাতেই রুদ্র মেয়েটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেলো। বাস হতে যতক্ষণ মেয়েটিকে দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণই মেয়েটির দিকে ভালোবাসা লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। যখনই চোখের আড়াল হলো তখনই চিন্তার জগতে মেয়েটি কড়া নাড়তে শুরু করলো। কত সুন্দর নাক, টানাটানা চোখ, লম্বা চুল, স্লিম পিগার, হাইটও পর্যাপ্ত এসব চিন্তা করতে করতেই বিধাতার কাছে মেয়েটির পুনরায় সাক্ষাতের মিনতি করে চলেছে।

 

মেয়েটির গায়ে বোরকা না থাকায় এবং চুল গুলো ছাড়া থাকায় রুদ্র চিন্তা করলো মেয়েটির বাড়ি হয়ত আশেপাশেই হবে। তারপর থেকে রুদ্র যখনই পথে দিয়ে যায় তখনই রাস্তাটির দিকে অঘোরে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু মেয়েটির দেখা না পায়। এভাবেই তাকিয়ে থাকতে থাকতে রুদ্রর জীবন থেকে চারটি বছর কেটে গেলো। এরমধ্যেই রুদ্র এলএলবি, এমএলএম ডিগ্রি সম্পন্ন করে জুডিশিয়ারির ভাইভা পর্যন্ত চলে গিয়েছে। রুদ্রর পরিবার তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়েই যাচ্ছেন। কিন্তু রুদ্র বিচারক হওয়ার আগে বিয়ে করতে নারাজ। অবশেষে মুমূর্ষু পিতার পুত্রবধূ দেখার সাধ মিটানোর জন্য বিয়েতে রাজি হন।

 

রাজি হওয়া মাত্রই রুদ্রর অবচেতনে চলে যাওয়া রাত্রীর পর রাত্রীর দেখা স্বপ্ন গুলো কল্পনার রাজ্যে মাথা নেড়ে উঠলো। ইসসস! সেই রমনীটাকে যদি বিয়ে করতে পারতাম। ভাবতে ভাবতে মনে হলো এপর্যায়ে আমি জুডিশিয়ারির ভাইভা পাশ করে বিচারক হতে চাইনা বরং সেই রমণীর সাক্ষাতের জন্য রাস্তায় পাগল সেজে বসে থাকা শ্রেয়। সম্ভীত ফিরে পেয়ে নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো; দূর কি সব ভাবছি। ঐ রমনী জীবিত আছে কিনা তাওতো আমি জানিনা। বরং এসব আবেগি কল্পনা বাদ দিয়ে বাস্তব কল্পায় লিপ্ত হই।

 

রাতের বেলা রুদ্র চিন্তা ভাবনা করে কেমন মেয়ে বিয়ে করতে চায় তা পরিবারকে জানালো। পরিবারকে যেমন মেয়ে দেখতে বললো তা হুবহু হলে পথীয় সে রমণীর কম হবেনা বরং অধিক হবে। কারণ তার চাহিদায় ছিলো তার স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্রী হবে। আর প্রথম সারির একজন হলেতো কথাই নাই। হবু স্ত্রী দেখতে মোটা হবেনা তবে চিকনাও বলা যাবেনা, দেখতে লম্বা হবেনা তবে বেটেও বলা যাবেনা, ফর্সা হবেনা তবে শ্যামলাও বলা যাবেনা, বাপের ছোট মেয়ে হবেনা, তবে বড়ও হবেনা।

 

রুদ্রর চাহিদা আলোকে তার পরিবার মেয়ে খোঁজা শুরু করলো কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মেয়ে পেলেও আইনে পড়া মেয়ে খুঁজে পাচ্ছিলোনা। এভাবেই মেয়ে খুজতে খুঁজতে ছয় ছয়টি মাস তথা অর্ধ-বছর কেটে গেলো। এর মাঝে রুদ্র ভাইভা শেষ করে সহকারী বিচারক হিসেবে নিয়োগ লাভ করে ফেলেছে। কিন্তু ছয় মাসেও এলাকায় আইনে পড়ুয়া রুদ্রর চাহিদামত মেয়ে পাওয়া গেলোনা। যার ফলে সকল আত্মীয় স্বজনকে যেমনই হোক আর যে বিষয়েই পড়ুয়া হোক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একটা মেয়ে দেখতো বলল। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সুন্দরী রমণীর সন্ধান দিলো কিন্তু রমণীর সৌন্দর্য ব্যতিত অন্য কোন সন্ধান দিতে পারেননি। অতঃপর বিভিন্ন মাধ্যমে মেয়েটির তথ্য সংগ্রহ করে জানা গেলো মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। মেয়েটির বাবার সাথে রুদ্রর ভগ্নিপতি বিয়ের ব্যাপারে কথা বললো। ভগ্নিপতির অনুরোধে মেয়ের বাবা রুদ্রর ভগ্নিপতিকে মেয়েটির ছবি দেখালো। রুদ্রর ভগ্নিপতির মেয়েটিকে দেখা মাত্রই পছন্দ হয়ে গেলো। উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে ছেলে-মেয়ে দেখাদেখির দিন ঠিক করলো।

 

দেখাদেখি অনুষ্ঠানে মেয়ে পক্ষের আপ্যায়নে রুদ্রর পছন্দের সব খাবার উপস্থিত ছিলো। যার কারণে সে খুবই সন্তুষ্ট(খাদক বলে কথা)

 

মেয়ের বাবার ধর্মীয় জ্ঞান থাকায় খাওয়া দাওয়া শেষে মেয়েকে সবার সামনে উপস্থিত না করে মেয়েকে নির্জন কক্ষে রাখলো। যখন মেয়েকে নির্জন কক্ষে রেখে রুদ্রকে মেয়ে দেখতে যাওয়ার জন্য ডাক দিলো তখন তার হার্টবিট বেড়ে, জিবের জল শুকিয়ে, চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে, চোখেমুখে অন্ধকার দেখতে শুরু করলো। কারণ রুদ্রতো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও কখনো কোনো মেয়ের সাথে একাকী নিবৃত্তে বসে কথা বলেনি।

 

রুদ্র কাঁপা কাঁপা পায়ে এক কদম দু'কদম করে নির্জন কক্ষের সামনে গিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ভিতরে ডুকার অনুমতি চাইলো। মেয়েটির হ্যাঁ সূচক উত্তর শোনার সময় মনে হলো কন্ঠের সাথে যাদু মিশানো। কত মিষ্টি গলা!

এই কন্ঠে " পাগলা তোর পাগলী হতে চাই" গানটি গাইলে কতো যে মধুর লাগবে। এটা ভাবতে ভাবতে গুটি গুটি পায়ে নির্জন কক্ষে প্রবেশ করা মাত্রই রুদ্র হতবিহ্বল হয়ে গেলো।

উফ! এইতো সেই মেয়ে যার জন্য রুদ্র দীর্ঘ সাড়ে চার বছর জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেছিল। কি আশ্চর্য ব্যাপার, কি আচমকা সাক্ষাতকার। বিধাতা চাইলে কি না করতে পারেন। উয়াওয়ো! কি কপাল!

অতঃপর সাক্ষাতে দু'জনের মাঝেই অনেক কথা হলো কিন্তু রুদ্র তার সাড়ে চার বছর জীবনে ঘটে যাওয়া স্বপ্নীয় গল্প গুলো শেয়ার করেনি। বরং বাসর রাতের জন্য গল্প গুলো জমা রেখেছে।

 

রচনাকাল:কোন এক রাত তিনটা বেজে আটচল্লিশ মিনিট।

Comments