জীবনের গল্প




 রুদ্র, বাস্তবতার সাথে লড়াকু একজন সৈনিকের নাম। গরিব পরিবারের সন্তান। তিন ভাই দুবোনের মধ্যে সে-ই বড়। সে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। মেঝো ভাই একাদশে, মেঝো বোন নবমে, ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণিতে আর ছোট ভাইটা সবেমাত্র হাটতে শিখেছে। পিতা একজন দিন মজুর।মাতা গৃহিণী।

পৃথিবীর প্রতিটা বাবারই স্বপ্ন তার সন্তান গুলোকে শিক্ষা দীক্ষায় সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করবে।তেমনি তার বাবাও দিন মজুরির টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি শত কষ্টেও তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ করে রুদ্রর জন্মদাত্রি জননী মরণ ব্যাধীতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ফলে রুদ্রর পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তার বাবার পক্ষে সংসার, মায়ের অসুস্থতার খরচ, চার ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তবুও তার পিতা হেরে যাবার পাত্র নয়। শত কষ্টেও পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার সীদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

রুদ্র প্রতিমাসে বাড়ি থেকে ২০০০/= নিয়ে আসতো। এদিয়েই তার মাস চলে যেতো। কিন্তু মায়ের অসুস্থতার পর থেকে বাড়ি হতে টাকা আনা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক খোঁজাখুজি করার পর এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ১৫০০/= মূল্যের একটা টিউশনি পায়। এই টাকা দিয়েই নিজ পড়াশোনা, খাওয়া দাওয়া, পোশাকাদির ব্যয় বহন করতে হয়। এ টাকা তার জন্য পর্যাপ্ততো দূরের কথা খাবারের মূল্যও না, তবুও চলতে হয়।

রুদ্র তার বিভাগের প্লেসদারী ছাত্র। সে ক্লাসের সবারই ভালো বন্ধু। শিক্ষকদেরও প্রিয় পাত্র। গায়ের রং শ্যামলা হলেও স্মার্ট প্রকৃতির ছেলে। সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে ভালো পোশাকাদি পরতে হয়। প্রতি মাসেই টিউশনির বেতন থেকে ভালো একটা টি-শার্ট, শার্ট বা প্যান্ট তৈরী করার চেষ্টা করে। ফলে প্রতিনিয়তই তাকে অনাহারী থাকতে হয়।

সকালে হলের ডাইনিংয়ে ১০ টাকার খিচুড়ি খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দেয়। সন্ধায় টিউশনিতে খাবার দেয়।এভাবেই সকালের খিচুড়ি আর সন্ধার টিউশনির খাবার ছিল তার দৈনিক আহার। কিন্তু বই পুস্তকাদি কিনতে গিয়ে সে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছিলো। বিভাগের বড় ভাইদের হতে বই হাওলাত করে পড়ত কিন্তু একদিন এক বড় ভাইয়ের বই ফেরত দিতে দেরী হওয়ায় খুব বকাবকি করে। ফলে রুদ্র নিজে বই কিনে পড়ার সীদ্ধান্ত নিলো। বই কিনতে গিয়ে তাকে বন্ধ করতে হলো সকালের ১০ টাকার খিচুড়ি। পানি খেয়েই দিন কাটিয়ে চলেছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন। না খেয়ে কি আর সারাদিন ক্লাস করা যায়।একটু খাবারের আশায় টিউশনিতে সন্ধার পাশাপাশি সকালেও যাওয়ার পরিকল্পনা করে। ছাত্রের আম্মুর সাথে কথা বলে সকাল বিকাল টিউশনিতে পড়াত। ছাত্রের আম্মু সকাল বিকাল খাবার দিত। এভাবে বেশ ভালোই কাটছিল তার দিনক্ষণ।

সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষা সম্মুখে চলে আসায় সকাল বেলা টিউশনিতে যেতে পারত না। ফলে সারাদিন না খেয়েই চলে যেত। কিন্তু এভাবে আর কত দিন। সকালে না খেয়ে পড়াশোনা করছে দুপুরে না খেয়ে থাকতে পারছে না। ব্যক্তিত্ববান মানুষ হওয়ায় কারো কাছে টাকা পয়সা হাওলাত চায় না। মূলত হাওলাতের টাকা মাসের শেষ ব্যতিত ফেরত দিতে পারবেনা বিধায় হাওলাত নেয়া হয়না। হলের ডাইনিংয়ে বিনা টাকায় ডাল-ভাত খাওয়া যায়। হলের ডাইনিংয়ে কর্তৃপক্ষের ভর্তুকি থাকলেও তা খুবই কম হওয়ায় ডাইনিং ম্যানেজার নিজ টাকা দিয়েই ডাইনিং চালায়। ফলে রুদ্র বিনা টাকায় ম্যানেজারের ডাল-ভাত খেতে চায় না।কিন্তু পেটের ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে রুদ্রকে বহুলাংশেই বিনা টাকায় ডাল-ভাত খেয়েই দিনাতিপাত করতে হয়।

লেখক,
মুহাম্মদ ইয়াসিন ত্বোহা

Comments