নেতা ও নির্বাচন:ইসলামি দৃষ্টিকোণ

                                 নেতা নির্বাচন:ইসলামি দৃষ্টিকোণ




ভোট ব্যক্তির নিজস্ব মতামত কিংবা জনমত প্রতিফলনের একটি গণতান্ত্রিক মাধ্যম বা পদ্ধতিবিশেষ
সমাজে প্রচলিত বহুল পরিচিত উক্তি ‘’আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেবমন্তব্যটি আপাত দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য হলেও ইসলাম কোনো ভাবেই তা সমর্থন করেনাকারণ আমরা যাকে ভোট দিচ্ছি তার সর্বোচ্চ যোগ্যতা সম্পর্কে সুপারিশ সাক্ষ্য প্রদান করার পাশাপাশি তাকে  প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদান করছিএখন নিজ খেয়াল খুশিমত যদি অসৎ অযোগ্য কোনো ব্যক্তিকে প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা প্রদান করি তাহলে তা সমাজ রাষ্ট্রের জন্য নিসন্দেহে ক্ষতিকরতাই ইসলামে তা সমর্থিত নয়ভোট যেমনি ব্যক্তির মৌলিক অধিকার  তেমনি পবিত্র আমানত বটেএকজন মুসলমান নাগরিক  অধিকার আমানতের খেয়ানত করতে পারেন নানাগরিকগণ নেতা নির্বাচনে তার অধিকার প্রয়োগ করার পাশাপাশি যোগ্য সৎ ব্যক্তিকে ভোট দেয়ার মাধ্যমে আমানত রক্ষা করা জরুরিমহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,’‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য সাক্ষ্য প্রদানে ন্যয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে যদিও তা তোমাদের নিজেদের কিংবা পিতা-মাতা অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয় যদি সে বিত্তশালী হয় কিংবা দরিদ্র হয় তবে আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর সুতরাং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে তোমরা প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা (প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে) এড়িয়ে যাও তবে (জেনে রেখ) তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত”(সুরা নিসা : আয়াত ১৩৫) অন্যত্র আরো ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ইনসাফের সঙ্গে আল্লাহর জন্য সাক্ষী হয়ে দাঁড়াও ’ -সূরা আন নিসা : ১৩৫ পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা আরো বলেন, ‘হে ইমানদার বান্দারা! তোমরা আল্লাহ তার রাসূলের সঙ্গে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং জেনে-শুনে নিজেদের আমানতেরও খিয়ানত করো না ’ -সূরা আল আনফাল : ২৭

মানুষ ফেরশতা নন,নবী-রাসূল ব্যতিত কেউ নিষ্পাপ নন,মানুষ নির্বোধ নন,কেউ ভুলের উর্ধ্বে ননশতভাগ ভালো মানুষ পাওয়া দুষ্করতথাপিও নিজ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে ন্যায়-অন্যায়,ভালো-মন্দ,হক-বাতিলের পার্থক্যকে সুস্পষ্ট করতে হবে কল্যাণ অকল্যাণে মিশ্রিত সময়ে অপেক্ষাকৃত তুলনামূলক সৎ,যোগ্য,দেশ প্রেমিক ইসলামপন্থী ব্যক্তিকেই ভোট দিতে হবে

কিন্তু মুসলিমদের ভাবনা শুরু হয় তখন,যখন দেখে সৎ যোগ্য কেউই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি
কেউ যদি চিন্তা করে যেহেতু সকল প্রার্থীই অসৎ অযোগ্য, সেহেতু কাউকেই ভোট দেওয়া সম্ভব না তাহলে বিষয়টিও উচিত হবে না কারণ, সাধারণ বিবেচনায় চিন্তা যুক্তিযুক্ত মনে হলেও এক্ষেত্রে কিন্তু মুদ্রার ভিন্ন পিঠও রয়েছেএখানেমন্দের ভালোনীতির প্রয়োগ করতে হবেবেশি অনিষ্টর পরিবর্তে অল্প অনিষ্টকে বেঁচে নিতে হবেযখন কাউকেই যোগ্য মনে হবেনা তখন ভাবতে হবে কার দ্বারা জনগণের উপকার না হলেও ক্ষতি হবেনাভেবে চিন্তে যার দ্বারা অধিক ক্ষতি হবেনা বলে মনে হয় তাকেই ভোট দিতে হবে

আবার কারো ব্যাপারে যদি খোদাদ্রোহিতা, ইসলাম বিদ্বেষ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে তাহলে তার বিজয় ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে ভোটকে যুলুমের বিরুদ্ধে মযলুমের রায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি সাহায্য কর, তোমার ভাইকে সে যদি যালিম কিংবা মযলুমও হয় এর ব্যাখ্যায় মহানবী (সা.) নিজেই বলেন, যালিমকে সাহায্য দানের অর্থ হলো যুলুম থেকে নিবৃত্ত রাখা তাই ভোট হতে পারে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে একটি নিরব প্রতিবাদ প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, তুমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাতের অথবা মুখের অথবা অন্তরের সাহায্যে লড়াই কর

গুরুত্বের কথা হলো,যেহেতু ভোট একটি রায় বা সাক্ষ্য তাই ভোট প্রদানের ব্যাপারে প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন হতে হবে কেননা, অন্যায় করা আর অন্যায়কে সমর্থন করা একই অপরাধ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কল্যাণকর কাজ এবং তাকওয়ার ব্যাপারে (একে অপরের) সহযোগিতা করো আর গোনাহ সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতা করো না’ (সূরা আল মায়েদা : ) ভোট প্রদান বা সমর্থনের মধ্য দিয়ে একটি দেশ জাতির ভবিষ্যৎ নির্মিত হয় সুতরাং প্রকৃত সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান, মানব-দরদী, সমাজসেবক খোদাভীরু প্রার্থীকে সমর্থন করতে হবে অন্যথায় অসৎ, অযোগ্য, প্রতারক, আল্লাহবিমুখ প্রার্থী ক্ষমতার মসনদে সমাসীন হলে শুধু সে নয় বরং গোটা সমাজ, দেশ জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে

সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় হজরত আবু বকর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) একদা এক জায়গায় হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় তিন তিনবার সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কী তোমাদেরকে কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে বড় কবীরা গুনাহের কথা বলব? সাহাবীগণ হ্যাঁ সূচক উত্তর দেওয়ার পর তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা ( দুটি কথা বলার পর তিনি সোজা হয়ে বসলেন) এবং বললেন, শুনে নাও! মিথ্যা সাক্ষ্য অনেক বড় কবীরা গুনাহসুনানে তিরমিযীতে মিথ্যা সাক্ষ্যকে শিরকের সমান অপরাধ বলা হয়েছে বিখ্যাত হাদীস বিশারদ শামসুদ্দীন যাহাবী (রহ.) মিথ্যা সাক্ষ্যকে চারটি বড় গুনাহের সমষ্টি বলে আখ্যা দিয়েছেন সেগুলো হচ্ছে : () নিজে মিথ্যা বলা অপবাদ আরোপ করা () যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিচ্ছে তার ওপর জুলুম করা () যার পক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে তার ওপরও প্রকৃতপক্ষে জুলুম করছে কারণ, সে যা কিছু পাওয়ার যোগ্য ছিল না ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্যর মাধ্যমে তাকে এর অধিকারী করে তুলছে এবং এভাবে তাকে করছে জাহান্নামী () মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা একটি হালাল কাজকে হারাম বানিয়ে নিচ্ছেভোট দানে মুসলমানদেরকে খুব সতর্ক হতে হবে কোরআনুল কারীমের ভাষায়যে ভালো সুপারিশ করবে সে তার নেকীর ভাগী হবে আর যে মন্দ সুপারিশ করবে সেও মন্দের হিস্যা পাবে’(সূরা নিসা, আয়াত ৮৫)

মনে রাখতে হবে, ভোটের বিষয়টি শুধু পার্থিব নয়, পরকালেও জন্য জবাবদিহি করতে হবে বিষয়টি মাথায় রেখে নির্বাচনে সম্মানিত ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এটাই  প্রত্যাশামহান প্রভু আমাদেরকে ভোটদানে ইসলামী নীতি অনুসরণ করতঃ সৎ যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার তাওফিক দান করুনআমিন



লেখক,
মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা
কলামিষ্ট প্রাবন্ধিক
ইমেইল-tohaarafat1998@gmail.com
মোবাইল-01781704368

Comments