নারীবাদের মূল কথা হলো, ‘একজন মানুষ হিসেবে নারীর তার পরিপূর্ণ অধিকারের দাবি’। নারীর অধিকার আদায়ের দাবি থেকেই নারীবাদের উৎপত্তি। ১৮৪৮ সালে, ‘সেনেকা কনভেনশন ফলস’এ নারীবাদের সূত্রপাত। ভোটাধিকার, রাজনৈতিক সমতা এবং আইনি অধিকার ছিলো নারীবাদের প্রথম ধাপের দাবি। ১৮৮৫ সালে মেরী কার্পেন্টারের নেতৃত্বে নারীদের মানবিক অধিকারের জন্য সংগঠন তৈরি হয় এবং আন্দোলন অব্যাহত থাকে যা নারীবাদী আন্দোলনরূপে পরিচিতি লাভ করে। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে নারীবাদের দ্বিতীয় উত্থান ঘটে। এই সময়ে নারীর সামাজিক ও আইনগত সাম্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়। তৃতীয় ধারার নারীবাদের মূল যুক্তি নারীরা বর্ণ, জাতি, দেশ, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন। তৃতীয় ধারার নারীবাদ সকল স্ববিরোধিতা ও দ্বন্দ্বকে গ্রহণ করে এবং সকল বৈচিত্র্য ও পরিবর্তনকে স্থান করে দেয় এবং নারীর জন্য কি মঙ্গলকর, কি মঙ্গলকর নয়, সে সম্পর্কে দ্বিতীয় ধারার মডেলকে চ্যালেঞ্জ করে। রাজা রামমোহন রায় ১৮১৮ সালে কলিকাতায় 'সহমরণ' বা 'সতীদাহ' প্রথা বিলোপের উদ্যোগ নেন। যার ফলে ১৮২৯ সালে লর্ড বেন্টিক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে আইন পাশ করেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারীর শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মেরী ককের সঙ্গে মিলে মোট ৪৩টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এছাড়াও বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করেগেছেন। স্থান ও দাবির প্রেক্ষিতে একেক জায়গায় নারীবাদকে একেক ভাবে দেখা হয়েছে।
কালের আবর্তনে নারীবাদের বিভিন্ন ধারা বিভিন্ন দর্শন
লালন করছে। নারীবাদের বিভিন্ন ধারার মধ্যে উদার নৈতিক নারীবাদ, মার্কসীয় নারীবাদ, আমূল নারীবাদ, সমাজতান্ত্রিক নারীবাদ, সাংস্কৃতিক নারীবাদ, পরিবেশ নারীবাদ ও বৈশ্বিক নারীবাদ ইত্যাদি প্রচলিত আছে। প্রাচ্য
ও পাশ্চাত্যের বিশিষ্ট জনেরা নারীবাদের যে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন তার পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান
করছেন বাংলাদেশী নারীবাদীরা। বাংলাদেশী নারীবাদীদের প্রথম আঙ্গুল হলো ইসলামের পর্দা
প্রথার দিকে। পর্দানশীল নারী দেখলেই তারা তেলে-বেগুনে ছেৎ করে উঠেন। তাদের দৃষ্টিতে
বোরকা ও হিজাব হলো নারীর আবদ্ধতার প্রতীক। ধর্মপালন ব্যক্তির অধিকার; যেখানে ধর্মের বিধান পর্দার সাথে গাদ্দারি করা হয় সেখানে স্বাভাবিক
ভাবেই মুসলিম নারীর অধিকার হরণ করা হয়। যে নারীবাদ এসেছে নারীর অধিকার আদায়ের জন্য
সে নারীবাদই বাংলাদেশে মুসলিম নারীদের অধিকার হরণ করতে চায়। এথেকে প্রমাণিত যে, বাংলাদেশে নারীবাদের মূলমন্ত্র হলো ইসলাম বিদ্বেষ।
যদি নারীবাদকে সঠিকভাবে নারীর
পরিপূর্ণ অধিকার আদায়ের দাবি হিসেবে উপস্থাপন করা হয় তবে আমি বলবো নারীবাদের মূল ভিত্তি
রচিত হয়েছে ইসলামে। আর এই নারীবাদকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম। জাহেলী যুগে নারীদের কোনো সামাজিক
মর্যাদা ছিলোনা। তাদেরকে পণ্যের মত বিক্রি করতো। যথেচ্ছা বিয়ে করতো আর তালাক দিতো।
কন্যা সন্তানকে অভিশাপ মনে করে জীবন্ত কবর দিতো। নারীকে দ্রুতগামী উঠের পিছনে বেঁধে
কষ্ট দিয়ে পুরুষরা মজা নিত। তাদেরকে দেয়া হতো না উত্তরাধিকার সম্পদ। নারীদের এমন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমণ ঘটলে নারীদের উত্থান ঘটে। ইসলামে কন্যা সন্তানকে জান্নাতের
সাথে তুলনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। রাসুলুল্লাহ (সা.)
নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ঘোষণা দেন, ‘সাবধান! তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। কেননা তারা তোমাদের
তত্ত্বাবধানে রয়েছে। সাবধান! তোমাদের স্ত্রীর ওপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের ওপরও রয়েছে তাদের অনুরূপ অধিকার। (রিয়াদুস সালেহিন
: প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৭৬, ২৮৩) বিবাহ, বিধবা বিবাহ, খুলা তালাক, স্ত্রীলোকের মৃত পিতা, মৃত স্বামীর সম্পত্তি ভোগের অধিকার প্রভৃতি বিধান দিয়ে রাসুলুল্লাহ
(সা.) ন্যায় ও ইনসাফ নিশ্চিত করে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নারীকে মর্যাদার আসনে সমাসীন
করেছেন।
বাংলাদেশী নারীবাদীরা বলে থাকেন
ইসলাম নারীদেরকে ঘরবন্দী করেছে। অথচ তারা জানেনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঘরবন্দী নারীদেরকে ময়দানে নিয়ে আসেন। ইসলামী
অর্থনীতি ও রাজনীতিতেও নারীদের অবদান ছিলো অগ্রগন্য। প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী নারী হযরত
খাদিজা রা. ছিলেন আরবের শীর্ষ ধনী ব্যবসায়ী ও বণিক সমিতির প্রধান। নারীরা রাসূলের সাথে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। রাসূলের
স্ত্রী হযরত আয়েশা রা. ছিলেন তৎকালীন সেরা ফকিহদের
অন্যতম। তিনি মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে রাজনৈতিক ময়দানেও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। সত্যের
পথে অস্ত্র হাতে উষ্ট্রের যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ইসলাম নারীদের নেতৃত্বকে সমর্থন
দেয়নি বলে বাংলাদেশী নারীবাদীরা ইসলাম নিয়ে যথেচ্ছা মন্তব্য করেন। কিন্তু তাদের কাউকে
যদি প্রশ্ন করি, মনে করুন আপনি ইসলামী
রাষ্ট্রের প্রধান। একদিকে আপনার সন্তান প্রসব হওয়ার পরিস্থিতি দেখা দিলো আর অন্য দিকে
আপনার রাষ্ট্রে যুদ্ধ বেঁধে গেলো তখন আপনি কিভাবে সে রাষ্ট্রকে রক্ষা করবেন? নিঃসন্দেহে এপ্রশ্নের সদুত্তোর পাওয়া যাবে না। তিনি কি সন্তান
প্রসব করবেন নাকি যুদ্ধ পরিচালনা করবেন? যুদ্ধের ময়দানে
জয়ের পূর্ব শর্ত কৌশল ও তাৎক্ষণিক সীদ্ধান্ত
নেয়ার ক্ষমতা। যেহেতু একজন নারীর পক্ষে এমন সমস্যা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব না
সেজন্যেই নারীদেরকে রাষ্ট্র প্রধান করার অনুমতি দেয়া হয়নি। এছাড়াও একজন নারী রাষ্ট্র প্রধান হলে সন্তান লালনসহ নানাবিধ
কারণে সঠিক ভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবেন না। এমন বহু যৌক্তিক কারণে ইসলাম নারীকে রাষ্ট্রপ্রধান
করেনি। তবে ইসলাম নারীকে মা, খালা, ফুপু, শাশুড়ি, বোন, কন্যা ইত্যাদি
নাম দিয়ে সমাজে যে মর্যাদা দিয়েছেন তা অন্য কেউ দেয়নি।
অনেক নারীবাদী বলে থাকে, ইসলাম নারীদের সাথে যদি এতোই সৌজন্যমূলক আচরণ করতো তবে নারীকে
নবী-রাসূল বানায়নি কেনো? তারা নারীকে নবী না বানানোর কারণ অনুসন্ধান করতে চায়না। ইসলাম
নারীকে নবী বানায়নি ঠিক কিন্তু নারীদেরকে নবীর মা বানিয়েছেন। পৃথিবীতে সৃষ্টির প্রথম
মানব-মানবী বাদ দিয়ে বাপ ছাড়া নবী(ঈসা আ.) হওয়ার ইতিহাস আছে কিন্তু মা ছাড়া কোনো নবী
নেই। মায়ের থেকে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন আর কে আছেন? একমাত্র ইসলামই নারীদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছে।
গ্রীকদের ধর্মীয় গ্রন্থসমূহে
‘নারীকে’ মানুষের
দুঃখ-কষ্টের মূল উৎস হিসেবে আখ্যায়িত করা
হয়েছে। এই নোংরা আক্বীদা তাদের নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। ফলে কিছুসংখ্যক
ব্যতীত অধিকাংশ গ্রীকদের নিকটে নারীর মর্যাদা ছিল না বললেই চলে। অধিকাংশের নিকট বিয়ে
ছিল বোঝাস্বরূপ। নারীদের প্রতি সমাজের দায়িত্ববোধ ছিল না বললেই চলে। তৎকালীন সমাজে নারীর অবস্থা পতিতালয়ের নারীদের চাইতেও করুণ ছিল।
রোমকদের পতনের পর খ্রিষ্ট ধর্ম
ইউরোপীয়দের মধ্যে প্রসার লাভ করে। রোমানদের করুণ পতন তাদের উপর দারুণ প্রভাব ফেলে।
সেজন্য তারা নারীসঙ্গ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদের ঘোষণানুযায়ী, নারী হলো সকল পাপের উৎস এবং মানবজাতির জন্য অভিশাপ। তারতুলিয়ান, ক্রিসোসতাম প্রমুখ পাদ্রী নেতা নারীর সাথে যে কোন উপায়ে যৌনাচারে
লিপ্ত হওয়াকে বিধিবদ্ধ ব্যাভিচার হিসাবে নিন্দনীয় মনে করলেও বিয়েকে হালাল বলে মনে
করতেন। খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকে প্রচলিত বৈষম্যমূলক নারী বিদ্বেষী এই সামাজিক প্রথা
সমগ্র খ্রিষ্টান জগতকে আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং নারীর প্রায় সকল অধিকার হরণ করে নেওয়া
হয়।
ইয়াহূদীদের ধারণা মতে, মা ‘হাওয়া’ ছিলেন ‘মানবজাতির
সকল দুঃখ-কষ্টের মূল’। এই ভুল
ধারণাই ইয়াহূদী সমাজ জীবনের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। ফলে তাদের সমাজে নারীর মর্যাদা বলতে
তেমন কিছুই ছিল না। গ্রীক সভ্যতার চরম অবক্ষয়ের যুগে ব্যবিলনীয় ও পারসিক সভ্যতায়
ব্যাপক অধঃপতন নেমে আসে। ব্যবিলনীয়দের মাঝে ব্যভিচার সাধারণ কর্মকাণ্ডের মতো সর্বত্র
ছড়িয়ে পড়ে। পারসিকদের মধ্যে ‘মাযদাকি’ মতবাদের প্রসার ঘটে। একই সময়ে হিন্দুদের মধ্যে ‘বামমার্গী’ নামক
চরম নোংরা ধর্মীয় মতবাদ চালু হয়। যেখানে নারীরা পরকালীন মুক্তির মিথ্যা প্রলোভনে
পড়ে বামমার্গী সাধুদের বাড়িতে ও মন্দিরে স্বেচ্ছায় এসে সাধুদের যৌনতৃপ্তি দিত। গ্রীকদের
ন্যায় নারীরা হিন্দুদের নিকট ‘পাপাত্মা’ বলে কথিত ছিল। সেকারণে তাদেরকে সম্পত্তির অধিকার, বিধবা বিবাহের অধিকার ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমনকি বিধবা
নারীকে মৃত স্বামীর চিতায় জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ব্যবস্থা করা হয়, যা ‘সতীদাহ’ প্রথা নামে পরিচিত। নারীদের জন্য শিক্ষা গ্রহণ ও ধর্মগ্রন্থ
স্পর্শ করা নিষিদ্ধ করা হয়। গান্ধর্ব বিবাহ, রাক্ষস বিবাহ, শিবলিঙ্গ পূজা প্রভৃতির মাধ্যমে তারা নারীকে স্রেফ ভোগের পণ্য
হিসেবে ব্যবহার করে, যা কম-বেশি
আজও চালু আছে।
বর্তমান যুগে কমিউনিস্ট বিশ্বে
যে সামাজিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তা
মূলত ইরানের প্রাচীন ‘মাযদাকী’ মতবাদেরই প্রতিচ্ছবি মাত্র। বাদশা নওশেরওয়া এর পিতা কোবাদ এর
আমলে ‘মাযদাক’ নামক
জনৈক চিন্তাবিদ মত প্রকাশ করেন যে, মানব সমাজে সকল অশান্তির মূল কারণ হলো, নারী ও অর্থ-সম্পদ। অতএব, এই দুটিকে ব্যক্তিমালিকানা থেকে বের করে জাতীয় মালিকানায় থাকতে
হবে। আগুন, পানি ও মাটিতে যেমন সকলের
অধিকার আছে, নারী ও সম্পদেও তেমনি
সকলের সমান অধিকার থাকবে। বর্তমান সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে সম্পদ জাতীয়করণ করা হয়েছে।
নারীর অবস্থা সেখানে মাযদাকী আমলের চেয়ে খুব একটা পৃথক নয়। সেখানে বিবাহ প্রথা চালু
থাকলেও,
ঘুনে ধরা কাঠের মতোই তা ভঙ্গুর। ফলে নারী সমাজের মর্যাদা ক্রমশই
ভোগ্যপণ্যের মতো অবস্থার দিকে যাচ্ছে।
যাদেরকে বর্তমান বিশ্ব সভ্যতা
ও নারী অধিকারের মানদন্ড হিসেবে উপস্থাপন করে সেই আমেরিকায় প্রতি ১০৭ সেকেন্ডে একজন
নারী ধর্ষণ অথবা যৌন নির্যাতনের শিকার হন এবং বছর শেষে গড়ে এ সংখ্যা এসে দাঁড়ায়
প্রায় ২ লাখ ৯৩ হাজার। শান্তির দেশ কানাডায় প্রতি চারজনে একজন নারী যৌন সহিংসতার
শিকার হন,
বার্ষিক যা প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার। মুক্ত গণতন্ত্রের দেশ গ্রেট
ব্রিটেনে প্রতি বছর ৮৫ হাজার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। বিশ্বে নারী ধর্ষণে শীর্ষ ১০ দেশের
মধ্যে একটিও মুসলিম রাষ্ট্র নেই। তথাপিও নারীবাদীরা ঘুরেফিরে ইসলাম নিয়ে বিদ্বেষ করে
বেড়াচ্ছে।
যেখানে নারীবাদের মূলমন্ত্র
ছিলো নারীর প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠা সেখানে বাংলাদেশে ফ্রি মিক্সিং, ওয়েস্টার্ন পোশাক, সন্ধ্যার পর বা রাত বিরাতে বাইরে থাকা, ধূমপান করা ইত্যাদিকে নারীর অধিকাররূপে ব্যাখ্যা করছে। একজন
নারী তার ইচ্ছেমতো স্বাধীন কাজ করতে পারবে। একজন নারীবাদী যদি তার পছন্দমতো আদর্শের
ভিত্তিতে খাপছাড়া বাঙালি সংস্কৃতি বহির্ভূত পোশাক পরতে পারে, তবে একজন নিরপেক্ষ মেয়ে স্বেচ্ছায় বোরকা হিজাব পরতে পারবে না
কেন?
বাংলাদেশে নারীবাদীরা পুরুষের ন্যায় সকল কাজ করতে চায় কিন্তু
তা আদৌ যে সম্ভব না তা বুঝতে চায় না। ‘পুরুষ পারলে নারীরা কেন পারবে না’ এমন বাক্য মনে পোষণ করার নামই নারী স্বাধীনতা নয়। একজন পুরুষ
চাইলেই মা হতে পারবে না আবার একজন নারী চাইলেই বাবা হতে পারবে না এটাই স্বাভাবিক। বর্তমান
নারীবাদীরা যে মতবাদ প্রচার করছে তা আদতে নারীবাদতো নয়ই বরং ইসলাম বিদ্বেষ বৈ আর কিছু
না।
ধর্মহীনতা বা ধর্ম নিয়ে হীন
মন্তব্য প্রচার করাটাই নারীবাদ না। ইসলাম ধর্মের সাথে নারীবাদের কোন দ্বন্দ্ব নেই।
ইসলাম ধর্মে নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্যের গণ্ডি গৃহাভ্যন্তরে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি, বরং তার সামাজিক অংশগ্রহণ অনুমোদন করেছে। তবে নারীবাদের নামে
নষ্টামি ও ভন্ডামিকে ইসলাম কেন, পৃথিবীর
কোন বিবেকবান সভ্য মানুষই সমর্থন করবে না।
ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কোরআনে
‘নিসা’ অর্থাৎ
‘মহিলা’ শব্দটি
৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটির ২৬ বার উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ‘নিসা’ তথা
‘মহিলা’ শিরোনামে
নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এ ছাড়া কোরআনের
বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম
নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ
সম্মান। ইসলাম এতো এতো অধিকার দেয়ার পরও যখন নারীবাদের নামে ইসলামের বিধানের কটু-মন্তব্য
করা হয় তখন নারীবাদের ইসলাম বিদ্বেষীতাই প্রমাণিত
হয়।
লেখক,
মুহাম্মদ ইয়াসিন ত্বোহা
কলাম লেখক ও প্রাবন্ধিক
ইমেইল- tohaarafat1998@gmail.com
Comments