মুসলমানদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে করণীয়

  





মুসলিম উম্মাহ আজ দিশেহারা। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে লুণ্ঠিত মানবতার নাম মুসলিমসমাজ। আমাদের চিন্তা করা দরকার যেই মুসলিম উম্মাহ সর্বদা নেতৃত্ব দিতে অভ্যস্ত ছিল, আজ তাদের এই অধঃপতন কেন? কেনইবা মাত্র ৫.২ মিলিয়ন ইহুদি প্রায় দেড়শো কোটি মুসলমানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বায়তুল মুকাদ্দাসে আধিপত্য বিস্তার করছে? কেনইবা প্রাচ্য-প্রাশ্চাত্যের নেতারা মুসলমানদের সংখ্যাধিক্যের ভ্রুক্ষেপ করছে না? কেনইবা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করা সত্ত্বেও আমাদের রক্ত জেগে উঠে না? নিশ্চয়ই মুসলিম উম্মাহ গুরুতর পাপে জড়িয়ে আছে। যা এমন অধঃপতনের পথকে সুগম করছে। মুসলিম উম্মাহ কখনো কাফেরদের শক্তির দ্বারা পরাজিত হয় না; বরং নিজেদের দুর্বলতার কারণেই পরাজিত হয়। যার স্পষ্ট উদাহরণ বদর ও উহুদ যুদ্ধ। বদরের প্রান্তরে মুসলমানদের দৃঢ়তার বলয়ে অনায়াসেই বিজয় লাভ হয়। কিন্তু উহুদ প্রান্তরে সামান্য আনুগত্যহীনতার কারণে মুসলমানদের সাময়িক পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। উম্মাহর প্রতিটি মানুষের অন্তরে আজ ব্যাধির আবাস। দুনিয়ার লোভ ও মৃত্যুকে অপছন্দ করাই হলো সেই গুরুতর ব্যাধি। সাহাবায়ে কেরাম জান্নাতলাভের আশায় মৃত্যুকে ভালোবাসতেন। কিন্তু আমরা দুনিয়ার লোভে মৃত্যুকে অপছন্দ করছি। উম্মাহর দুর্যোগটা মূলত মুসলমানদের অন্তরে দুনিয়ার ভালোবাসা বেড়ে যাওয়া এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা। মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ব্যাপারে ভয়াবহ ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, খাদ্য গ্রহণকারীদের যেমনিভাবে খাবারপাত্রের চতুর্দিকে ডেকে আনা হয়, তেমনিভাবে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে একে অপরকে ডেকে আনবে। এক ব্যক্তি বললো, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা বরং সেদিন প্রচুর সংখ্যক হবে। কিন্তু তোমরা হবে বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের আতঙ্ক দূর করে  দেবেন এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহনঢেলে দেবেন। সাহাবীরা বললেন, হে রাসুলুল্লাহ! আল-ওয়াহনকি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলো দুনিয়ার ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা।’ (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নং-৪২৯৭)

 

আজ এই দুনিয়ার লোভে মুসলমানগণ নিজেদের জাত-পরিচয় ভুলে গেছে। সামান্য স্বার্থের জন্য মুসলিমরা দীনের ক্ষেত্রে ত্রুটি করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। ক্ষমতা ও অর্থ লোভে কাফেরদের সাথে হাত মিলাচ্ছে। এমন কী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভিশাপপ্রাপ্ত ইহুদিদের সাথেও সখ্যতা গড়ে তুলছে। মুসলিম আজ তার ইতিহাস ঐতিহ্য ভুলে গেছে। আমরা ভুলে গেছি সাহাবায়ে কেরামগণের শহীদী চেতনা। ভুলে গেছি তারিকের পুত্র জিয়াদ কর্তৃক আন্দালুসিয়া তথা বর্তমান স্পেন জয়ের সেই ঐতিহাসিক ঘটনা। ভুলে গেছি সুলতান ইমামুদ্দিন জিনকি ও তার পুত্র নুরুদ্দিন মাহমুদ জিনকির ক্রুসেড যুদ্ধের ইতিহাস। ভুলে গেছি সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী কর্তৃক সমগ্র খ্রিস্টান জাতিকে পরাজিত করে জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের ইতিহাস। ভুলে গেছি লেবাননের বীর শহীদ ওমর মুখতারের সেই অমীয় বক্তব্য আমরা কলোনী মুক্ত করবো নয়তো শহীদ হবো সেদিন ইতালির মুসোলোনী কর্তৃক শত লোভ-লালসার প্রস্তাব ওমর মুখতারকে তার পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ওমর মুখতারের বক্তব্য ছিল, আমার শাহাদাত উম্মাহর জন্য শিক্ষা হবে যে, মুসলিম ফাঁসির কাষ্ঠ বরণ করবে তবুও বাতিলের সাথে আপস করবে না। কিন্তু আফসোস, বর্তমানে মুসলিম উম্মাহ সামান্য ক্ষমতা, আর্থিক সহায়তা ও পণ্য-দ্রব্যের লোভে কাফেরদের নিকট নিজেদের আত্মমর্যাদা বিলিয়ে দিচ্ছে।

 

মুসলমানদের নিকট আজ আখেরাতের মূল্য নেই। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলেন, ‘বলুন, দুনিয়ার সুখ সামান্য। আর যে তাকওয়া অবলম্বন করবে তার জন্য আখিরাত উত্তম।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৭৭) মুসলমান আজ এই আয়াত অমান্য করায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। আর ধ্বংসের পরেই হয় পরিবর্তন। অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের স্থলে অন্য কোনো জাতিকে স্থলাভিষিক্ত করবেনা।’ (সুরা মোহাম্মদ, আয়াত-৩৮) আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া সামান্য মাত্র। এব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কসম! আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া হচ্ছে, ‘যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রের জলে এই আঙ্গুল (তর্জনী) রাখলো। অতঃপর তোমাদের কেউ যেন দেখে তার আঙ্গুল কতটুকু পানি উঠিয়ে আনতে পেরেছে। আজ দুনিয়া ও আখেরাতের এই পরিধির দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা।

 

আমাদের পরিকল্পনা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। দূর করতে হবে আমাদের সব ব্যাধি। এখানে ব্যাধি থেকে পরিশুদ্ধতার উপায় তুলে ধরা হলো-

 

১. দুনিয়ার লালসা থেকে মুক্ত হওয়া :

 

 দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ত অন্তর লুণ্ঠিত ভূমি মুক্ত করতে পারে না। দুনিয়ামুখী মানুষ কেবল নিজের জন্যই বেঁচে থাকে। কেবলই খাদ্য, পানীয়, প্রভাব-প্রতিপত্তি, বিনোদন ও বিলাসিতায় মত্ত থাকে। এই অবস্থায় বিজয় অর্জন করা সম্ভব নয়। আমাদেরকে বিজয় লাভের জন্য হযরত হানজালা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর জীবনী অনুসরণ করতে হবে। ওহুদ যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবী শহীদ হয়েছেন। একেক জনের লাশ মোবারক এনে এক জায়গায় রাখা হচ্ছে। রাসুলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুনে দেখলেন ৬৮ টি লাশ মোবারক। ২ টি নেই, একজন তাঁর চাচা হামজা (রাঃ) আরেকজন হানজালা (রাঃ) অস্থির হয়ে পড়েছেন নবীজি। সকল সাহাবিদেরকে পাঠালেন লাশ মোবারক খোজার জন্য। হঠাৎ বোরখা পড়া এক মহিলা এসে দাঁড়ালেন নবীজির সামনে। মহিলা আরজ করলেন; ইয়া রাসুলাল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়াসাল্লাম আজ আপনি একটা বিয়ে পড়িয়েছেন? রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; হা আমি তো হানজালা রাঃ বিয়ে পড়িয়েছি। যার বিয়ের খুশিতে আমি খুরমা খেজুর ছিটিয়ে ছিলাম। মহিলা বললেন; ইয়া রাসুলাল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাতের মেহেদী এখনও শুকায় নি। কাল বিকেলে বিয়ে হয়েছে আর রাতে উহুদের যুদ্ধের জন্য বের হয়ে গেছেন হাঞ্জালা রাঃ। বাসর রাতে তার সাথে আমার ভালোভাবে পরিচয়ই হয়নি। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেছেন যদি দেখা হয় তাহলে দেখা হবে দুনিয়ায়, আর যদি শহীদ হয়ে যাই তাহলে দেখা হবে জান্নাতে আল্লাহু আকবার। মহিলা বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাওয়ার আগে লজ্জায় আমি তাঁকে বলতেও পারিনি যে আপনার জন্য গোসল ফরজ। ভালোবাসার  কান্ডারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদতে লাগলেন। একজন সাহাবি দৌড়ে এসে বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হানজালা রাঃ কে পাওয়া গেছে। রাসুলুল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে যাওয়ার সময় দুই হাত দিয়ে ভীড় ঠেলে (যদিও পুরা জায়গাই ফাকা ছিলো, সাহাবারা প্রশ্ন করলে নবিজী বলেন যে হানযালা রাঃ কে গোসল দিতে আকাশ থেকে ফেরেশতারা এসেছেন) লাশ মোবারকের কাছে গিয়ে দেখলেন লাশ মোবারকের মাথায় পানি। নবীজি মাথা হাত বুলিয়ে দিলেন। জিবরাঈল আঃ এসে বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ স্বাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হানজালার রাঃ কোরবানিতে আল্লাহ্ এতটাই খুশি হয়েছেন যে তিনি ফেরেশতাদের আদেশ করলেন জমজমের পানি দিয়ে গোসল করাতে এবং তাঁর শরীরে যে সুগন্ধ দেখছেন এটি বিশেষ খুসবু মিশক আম্বর আতর যা কাফনের কাপড়ে ঢোকানো হয়েছে। সুবহানআল্লাহ। হযরত হানজালার মত দুনিয়ার বোঝা থেকে ভারমুক্ত হয়ে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসায় নিজের জীবন দিয়ে ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলেই কেবল উম্মাহর সোনালী দিন ফিরে আসবে।

 

২. উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধকরণ :

 

মুসলমানদের দলগত শক্তিকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলতে যা প্রয়োজন তা হলো আল্লাহর ভয় এবং পারস্পরিক ঐক্য। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রামের বিকল্প নাই। ভারতে উগ্রপন্থী হিন্দুদের জয়শ্রীরাম ধ্বনির প্রতিরোধে মুসলিম বোনের আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে তাদের আওয়াজ ম্লান হতে দেখেছি। মুসলিম উম্মাহ যদি সম্মিলিত ভাবে সারা বিশ্বে একযোগে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে ভূখন্ডকে মুখরিত করতে পারতো তাহলে এই বিশ্ব ভুবনের সকল জালিমের হাত থেকে তাদের ঝান্ডা পড়ে নিঃস্ব হয়ে যেতো। মুসলমান আজ নিজেরাই নিজেদের শত্রু নিজেরা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত। এক দল যখন অপর দলকে কাফের বাতিল ফতুয়া দিতে ব্যস্ত তখন কাফের সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিচ্ছে।  মুসলমানদের অনৈক্যের ফলে মুসলিম নিজেদের ভুখন্ড হারাচ্ছে। আন্দালুসিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ মুসলমানদের শাসনামলে থাকার পর সর্বশেষ দুর্গ গ্রানাডা অঞ্চলে সংঘটিত প্রতিরোধ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে মুসলিমরা আন্দালুসিয়া হারায়। কালক্রমে সেই আন্দালুসিয়া মুসলমানদের স্মৃতিপট থেকেই যেন হারিয়ে গেছে। মুসলমানগণ বর্তমানে স্পেন থেকে পর্যটন ভিসা নিয়ে আন্দালুসিয়ার কর্ডোভা মসজিদে ভ্রমণে যায়। ফিলিস্তিনের ব্যাপারটাও আজ সেদিকেই যাচ্ছে। ফিলিস্তিনরা প্রতিনিয়ত নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হলেও বিশ্ব মুসলমানের টনক নড়ছে না। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় আমাদেরকে ইসরায়েলের ভিসা নিয়ে আল-আকসা ভ্রমণে যেতে হবে। মায়ানমারে অকাতরে মুসলমানদের হত্যা-ধর্ষণ করা হলেও মুসলিমদের তেমন টনক নড়েনি। দুয়েকটি নিন্দা বার্তা ও নাম মাত্র ত্রাণ ব্যতিত মায়ানমারের অসহায় মুসলিমদের জন্য উম্মাহ তেমন কিছু করতে পারেনি। সারা বিশ্বে মুসলমানরা অবহেলার পাত্রে পরিণত। অথচ মুসলমানদের দাপটে সারা বিশ্বে সকল সন্ধ্যা ভূমিকম্প হওয়ার কথা ছিলো।  মুসলমানদের আজ ঐক্য গড়া ব্যতিত অন্য কোনো চিন্তা লালন করা ঠিক হবে না। উম্মাহকে আজ কালেমার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল জাত বিভেদ ভুলে মুসলিম হিসেবে একে অপরের পাশে দাড়াতে হবে।  মুসলমান যখন বন্ধনে আবদ্ধ হবে মহান প্রভু তখন বরকত ও দৃঢ়তা দান করবেন। যা উম্মাহকে  অজেয় করে তুলবে।

 

৩. সর্বদা মৃত্যুর কথা স্মরণ করা :

 

মহান আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কোরআনের সুরা আল ইমরানের ১৮৫ আয়াতে বলেন, ”প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্যি আর কিছু কী আছে এই পৃথিবীতে? জীবনের মোহে পড়ে আমরা বেশিরভাগ সময়েই মৃত্যুর মতো অবধারিত সত্য ভুলে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ি। মৃত্যুকে স্মরণ মানুষকে পাপকর্ম থেকে বাঁচায়। আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলতে সহায়তা করে। মনকে নরম করে। ইবাদতে আসে একনিষ্ঠতা। এমন কেউ কি আছে, যে মৃত্যুকে ভয় পায় না? মৃত্যুর স্মরণে মনটা কেঁপে ওঠে না? মৃত্যুকে স্মরণের কথা রাসুলুল্লাহর (সা.) একাধিক হাদিসে বলা হয়েছে। সাহাবিরা মৃত্যুকে স্মরণে হাউমাউ করে কাঁদতেন। আল্লাহপ্রেমে মশগুল মানুষমাত্রই মৃত্যুর স্মরণে ভীত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জীবনের স্বাদ বিনষ্টকারী মৃত্যুকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো (তিরমিজি-২৩০৭) প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কথা স্মরণ করা দরকার এ জন্য যে, প্রথমত এটা পাপকর্ম থেকে বিরত রাখবে। দ্বিতীয়ত, বান্দা যখনই মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে, তখন পরকালের পাথেয় সংগ্রহে তৎপর হবে। হাদিসে এসেছে, এক সাহাবি রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল, দুনিয়াতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি কারা? তিনি জবাব দিলেন, যারা মৃত্যুর কথা অধিক পরিমাণে স্মরণ করে এবং তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। দুনিয়া-আখেরাতে তারাই সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরিহিত হবে (মুজামুল কাবির-১৩৫৩৬) ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহর (সা.) সঙ্গে বসা ছিলাম। এ সময় এক আনসার তার কাছে আসে। সে নবীকে (সা.) সালাম করে বলে, হে আল্লাহর রাসুল, সর্বাপেক্ষা উত্তম ইমানদার কে? তিনি বলেছেন, তাদের মধ্যে যাদের চরিত্র উত্তম। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করে, সর্বাপেক্ষা পারদর্শী ইমানদার কে? তিনি বললেন, যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, এরাই সর্বোত্তম দূরদর্শী (ইবনে মাজাহ-৪২৬০) রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, উপদেশের জন্য মৃত্যু এবং ধনাঢ্যতার জন্য বিশ্বাসই যথেষ্ট (তাবরানি) প্রত্যেকেরই মৃত্যুর সময় নির্ধারিত। ইহা এক সেকেন্ডও এদিক-সেদিক হবে না। কখন মৃত্যু আসবে, মানুষ জানে না। মানুষ যেন মৃত্যুকে ভুলেই থাকে। দুনিয়ার আরাম-আয়েশের পেছনে ছুটে চলা দেখলে তো তাই মনে হয়। আমরা কেন ভুলে যাই  দৃশ্য-অদৃশ্য যা কিছু হয়; সবই আল্লাহপাক দেখেন। মানুষের মনের কথাও আল্লাহপাক জানেন। মানুষ মানুষকে ফাঁকি দিতে পারে; কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিনকে ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। এই চিন্তাটুকু মাথায় থাকা জরুরি। কোরআন মজিদে বলা হয়েছে- হে নবী, আপনি বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়ন করতে চাও, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের কাছে পৌঁছবে। অতঃপর তোমরা অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। আর তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন তোমাদের সেসব কর্ম, যা তোমরা দুনিয়াতে করতে (সুরা জুমা-৮) মৃত্যুর স্মরণ কোনো দুঃখপূর্ণ বা নেতিবাচক বিষয় নয়; বরং রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের অনুসরণ। মৃত্যুর স্মরণ সর্বদা নিজের কর্মকাণ্ডের হিসাব গ্রহণ, গুনাহ থেকে তাওবা করা, আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।

 

৪. ইলমি মজলিসে উপস্থিত হয়ে ইলম অর্জন :

 

ইলমে মজলিস বিজয়ের চূড়ান্ত একটি মাধ্যম। সর্বদা ইলমি মজলিসগুলোর উপস্থিতি যে কোনো মুসলমানকে পদস্খলন থেকে রক্ষা করে। ভুল-ত্রুটি থেকে বাঁচিয়ে দেয়। শরিয়তের জ্ঞান দান করে এবং সিরাতে মুস্তাকিমের পথে পরিচালিত করে। শরীয়তের জ্ঞানার্জন করার প্রতিটা মুসলিমের উপর ফরজ করা হয়েছে। কেননা ইলম তথা জ্ঞান ব্যতিত ইসলামকে কল্পনা করা যায়না। ইলম ছাড়া ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন- কোনো ক্ষেত্রেই সত্যিকার অর্থে ইসলাম পালন সম্ভব নয়। তাবেঈ উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহ. বলেন- যে ব্যক্তি ইলম ছাড়া আমল করবে সে  সঠিকভাবে যতটুকু করবে না করবে, বরবাদ করবে তার চেয়ে বেশি। -তারীখে তাবারী ৬/৫৭২ ইলমে মজলিসের স্থানকে জান্নাতের বাগানন বলে সম্বোধন করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলমের প্রতি এত উৎসাহ দিয়েছেন এবং এত অধিক ফযীলত বর্ণনা করেছেন যে, বৃদ্ধদের মাঝেও ইলম তলবের অদম্য স্পৃহা জেগে উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, ইলমের প্রতি অনীহা প্রকাশকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। ইলমের প্রতি কোনো এক সম্প্রদায়ের অনাগ্রহের কথা জানার পর তিনি ইরশাদ করেন- ওই সম্প্রদায়ের কী হল যে, তারা প্রতিবেশীদেরকে দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ দান করে না; দ্বীন শিক্ষা দেয় না, দ্বীনের বিষয়াবলী বোঝায় না, তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করে না, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে না? ওই সম্প্রদায়েরই বা কী হল যে, তারা প্রতিবেশী থেকে দ্বীন শেখে না, দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ নেয় না, দ্বীনের বিষয়াদি বুঝে নেয় না? আল্লাহর কসম! হয়ত তারা তাদের প্রতিবেশীদেরকে দ্বীন শেখাবে, দ্বীনের সঠিক সমঝ ও বুঝ দান করবে, দ্বীনের বিষয়াদি বোঝাবে, সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে আর যারা জানে না ওরা তাদের থেকে শিখবে, সঠিক বুঝ গ্রহণ করবে, দ্বীনের বিষয়াদি ভালোভাবে বুঝে নেবে নতুবা আমি তাদেরকে দুনিয়াতেই নগদ শাস্তি দিব। -(আলমুজামুল কাবীর, তবারানী; মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ ১/১৬৪)

 

 মুসলিম উম্মাহ আজ ইলম থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। একদল না বুঝেই ইসলাম মানার চেষ্টা করছেন আবার একদল হুজুর না বুঝেই ইসলামের ব্যাখ্যা করে যাচ্ছেন। তারা ইসলামের যতটুকু না উপকার করছে তার চেয়ে যেন বেশি ক্ষতি করছে। মুসলমানদেরকে ইসলাম জানার জন্য দ্বীন বুঝার জন্য নিয়মিত ইলমে মজলিসে উপস্থিত হওয়া জরুরী। কেননা ইলমে মজলিস ব্যতিত শরীয়তের জ্ঞানার্জন অসম্ভব প্রায়।

 

৫. গভীরভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী অধ্যয়ন করা :

 

মুসলমানগণ বই, কিতাব, পত্র-পত্রিকা, ফিল্ম ও অন্যান্য মিডিয়ায় অবগাহন করে পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের শিক্ষা-সংস্কৃতি গিলছে গোগ্রাসে। অথচ আমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী অধ্যয়নে বুদ হয়ে থাকা উচিত ছিলো। কেননা সকল জ্ঞানের বাস্তব নমুনা হলো রাসূলের জীবনী। যুগ-যুগান্তর ধরে মানুষ যে জ্ঞান, পাণ্ডিত্য, মনীষা, মেধা ও মুক্তির সাধনা করে এসেছে, রাসূলে আরাবীতে এসে তা পূর্ণতা পেয়েছে। মানুষের কালান্তরের ন্যায়, সততা, পবিত্রতা, আধ্যাত্মিকতা, মনুষ্যত্ব তথা মানবিক গুণাবলীরর সামগ্রিক সাধনা তাঁর মাঝে এসে চূড়ান্ত আকৃতি পেয়েছে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সার্বিক জীবনাদর্শ উম্মতের পরিপূর্ণ জীবন বিধান। তাঁর গোটা জীবন ইসলামের জীবন্ত ব্যাখ্যা। কাজেই কেবল ধর্মগুরু হিসেবেই নয়, বরং একজন পূর্ণমানব হিসেবেও মুহাম্মদ সাঃ কে অধ্যয়ন করা, তাঁর সীরাত বিষয়ে তথ্যনির্ভর, সহীহ-শুদ্ধ গ্রন্থ পড়ে দেখা সকলের-ই উচিত। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা, নিত্যনৈমিত্তিক পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সকল আপডেট অধ্যয়নে থাকলেও সীরাত অধ্যয়নে উম্মতের অবহেলা ও উদাসীনতা ব্যাপক। সাধারণ লোক শুধু নয়, মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক ব্যতীত অনেক আলেম- উলামারও  নবী সাঃ সম্পর্কে পড়াশোনা অবিশ্বাস্য রকম অল্প। সীরাত পাঠের এই দৈন্যদশা ঘুচিয়ে পাঠকমণ্ডলীকে সীরাতমুখী করার প্রয়াস চালাতে হবে।  রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনটাই হলো ইসলাম। তাঁর জীবনই কোরআনের বাস্তব নমুনা। তিনি নিজে সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। আমরা রাসুলের জীবনী নিয়ে সঠিকভাবে চিন্তা করলে, আমরা চিনতে পারবো-কে বন্ধু আর কে শত্রু। আমরা বুঝতে পারবো- বিজয়ের মাধ্যম ও পরাজয়ের কারণসমূহ।

 

 

 

৬. উম্মাহর গর্বিত ইতিহাস জানা :

 

ইতিহাস হলো কালের দর্পণ। দর্পণ কিংবা আয়নায় যেমন ভেসে ওঠে মানুষের প্রতিচ্ছবি, তেমনি ইতিহাসের পাতায় ভেসে ওঠে কালের প্রতিচ্ছবি। ইতিহাস কালের দর্পণ বলেই খৃষ্টীয় একবিংশ শতাব্দীতে বসেও আমরা দেখতে পাই খৃষ্টপূর্ব একবিংশ শতাব্দীর প্রতিচ্ছবি। যে-কালের দর্পণ আছে, সে-কাল টিকে থাকবে চিরদিন। যে-কালের দর্পণ নেই, সে-কাল সময়-গহ্বরে বিলীন হয়ে যায়। মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস যেন আজ বিলীন হওয়ার পথে। মুসলিম যুবক অবলীয়ায় বিভিন্ন দেশের রাজধানী, মুদ্রা ও শহর-বন্দরের নাম বলে দেয়; এক নিঃশ্বাসে দশ বারো জন কবি দার্শনিকের জন্ম ও মৃত্যু সাল বলতে পারে অথচ মুসলিম খিলাফতের নাম ও সাল গুলো বলতে পারেনা। মুসলমানদেরকে নিজেদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জানতে হবে। পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার রীতি হলো প্রতিটি ঘটনা পৃথিবীতে ঘুরেফিরে আসে, বারবার ঘটে। প্রতিটি সুখ ও শোক, উত্থান ও পতন, স্ট্র্যাটেজি ও ট্র্যাজেডি সবকিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটে। কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন নবির উম্মতের বিবরণ, তাদের স্ট্র্যাটেজি ও ট্র্যাজেডি এবং ইতিহাসের গলিঘুপচি থেকে উঠে-আসা ইতিহাসগ্রন্থাদি এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। বহু নবির উম্মতের ক্ষেত্রে সুন্নাতুল্লাহ তথা আল্লাহ্র নীতি ও রীতি অভিন্নভাবে প্রয়োগ হয়েছে। ইতিহাসের বহু রাজা-বাদশাহর উত্থান-পতন একই আঙ্গিকে হয়েছে। এমনকি আধুনিক রাষ্ট্রের ইতিহাসেও বহু রাষ্ট্রের স্বাধীনতার ইতিহাস একটি অপরটিতে পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। তাই নবীগণ থেকে শুরু করে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী, সলফে সালেহীন এবং যুগে যুগে ঘটমান উম্মাহর বিজয় ইতিহাস জানতে হবে। তা আমাদের অন্তরে নতুন করে জেগে উঠার সাহস ও স্বপ্ন জোগাবে। এবং ইতিহাস থেকে আমরা শত্রু মোকাবেলার কৌশলাদি জানতে পারবো।

 

৭. আল্লাহর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্বহীনতা :

 

আল্লাহর শত্রুদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন ইমানের দুর্বলতা ও আকিদার ভ্রষ্টতার লক্ষ্মণ। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চয়ই তাদের একজন। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেম সমপ্রদায়কে হিদায়াত দেননা। সুতরাং তুমি দেখতে পাবে, যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা কাফিরদের মাঝে (বন্ধুত্বের জন্য) ছোটাছুটি করছে। (সুরা মায়িদাহ, আয়াত-৫১) আবূ উমামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন: যে আল্লাহর জন্য ভালবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্য প্রদান থেকে বিরত থাকে সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে।এ সকল আয়াত ও হাদীসের নির্দেশনা খুবই সুস্পষ্ট। মুমিন ঈমান ও ঈামনদারদেরকে ভালবাসবেন এবং কুফর ও কুফরে লিপ্ত মানুষদেরক ঘৃণা করবেন বা অপছন্দ করবেন। ঈমান ও ঈমানদারকে ভালবাসা এবং কুফর ও কাফিরকে ঘৃণা করা মূলত ‘‘ঈমান’’-এর অবিচ্ছেদ্য অংশ। আফসোস যে, আজকে মুসলিম নিজ আপন মুসলিম ভাইকে শত্রু জ্ঞান করে কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করছে। ফলে কাফের সম্প্রদায় কাটা দিয়ে কাটা তোলার ন্যায় মুসলমানদের দিয়েই মুসলমানদের ধ্বংস করছে। কাফের সম্প্রদায় কখনো মুসলমানের কল্যাণ কামী হতে পারেনা।  আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারেরা! নিজের পিতা এবং ভাইও যদি ঈমানের চেয়ে কুফরীকে বেশী ভালোবাসে তাদেরকেও বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। যে ব্যক্তিই এ ধরনের লোকদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে সেই যালিম হিসেবে গণ্য হবে। সূরা আত তাওবা, আয়াত : ২৩।

 

৮. সময়কে যথাযথ কাজে লাগানো :

 

সময় ও জীবন আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠ দান। সময়ের ইতিবাচক ব্যবহারই জীবনের পরিপূর্ণ সফলতা নিহিত। সময়ের অপচয় ও অপব্যবহার জীবনের চরম ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যায়। সময়ের যথাযথ ব্যবহার না করা বা অপব্যবহার করার জন্য জবাবদিহি করতে হবে আল্লাহর দরবারে। মহাগ্রন্থ কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা আসর, আয়াত: ১-৩)  একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করা হলো, সৌভাগ্যবান কারা? তিনি বললেন, সৌভাগ্যবান তারা, যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, দুর্ভাগা কারা? তিনি বললেন, দুর্ভাগা তারা যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে এবং তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলবিহীন অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি: ২৩২৯, মুসনাদে আহমাদ: ১৭৭৩৪, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৬:১১১) গম্ভীর ও গুরুত্বপূর্ণ জীবনে এক মুহূর্ত সময়ও নষ্ট হতে পারে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনে একটি মিনিটও অযথায় ব্যয় হয়নি। যথাযথ পরিকল্পনা ও সঠিক পদ্ধতি ছাড়া কেউ উঁচু স্তরে পৌঁছাতে পারেনা। তাই প্রত্যেক মুসলমানকে সময়ের মূল্যায়ন করতে হবে। যথাযথভাবে সময়কে কাজে লাগাতে হবে।

 


 ৯. সর্বত্র জিহাদের শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া।

 

সমগ্র মানবজাতির সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করে ইসলামের নিজস্ব মতাদর্শ অনুসারে নতুন করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে চেষ্টা, সংগ্রাম ও চূড়ান্ত শক্তি প্রয়োগের নামই হলো জিহাদ" বিশেষ কোনো জাতির হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে অন্য কোনো বিশেষ জাতির হাতে তুলে দেয়া ইসলামের লক্ষ্য নয়। বরং এর লক্ষ্য সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে ইসলামের পরিপূর্ণ আদর্শ দ্বারা সারা বিশ্বকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করে তোলা। মুখের ভাষা ও লেখনির সাহায্যে মানুষের মানসিকতা, চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন সাধন করা এবং তাদের মধ্যে অন্তর্বিপ্লবসৃষ্টি করা জিহাদের একটি দিক। আবার তরবারি  ব্যবহার করে 'অনৈসলামিক সমাজ ব্যবস্থা' নির্মূল করে নতুন 'সুবিচারমূলক ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা' প্রতিষ্ঠা করাও জিহাদের একটি দিক। এপথে মেধা, অর্থ-সম্পদ, শারীরিক শক্তি সামর্থ্য নিয়োগ করাও জিহাদ। প্রচুর তথ্য সন্ত্রাস, মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও বিভিন্ন ট্যাগ; যেমন-উগ্রপন্থা, চরমপন্থা, ব্রেইন ওয়াশড, জঙ্গি ইত্যাদি লাগানোর ফলে বর্তমানে অনেক সাধারণ মুসলিম জিহাদশব্দ শুনলেই ভয় পায়। এজন্য শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে জিহাদের মূলশিক্ষা ও প্রতিপাদ্য বিষয়টা সর্বত্র তুলে ধরতে হবে। কারণ জিহাদ হলো মর্যাদাপূর্ণ শ্রেষ্ঠ আমল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি জিহাদের সমতুল্য কোনো আমল পাইনি (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৭৮৫)

 

সবিশেষ উল্লেখ্য যে, নিজেদের পাপ-পঙ্কিলতা মোচন করত সকল ব্যাধি দূর করতে হবে। মুসলিম উম্মাহকে নতুন করে বিশ্বজয়ের পরিকল্পনা সাজাতে হবে। নিজেদের ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনতে আমাদের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহর প্রতি সহায় হোন। আমিন।




লেখক,
মুহাম্মদ ইয়াসিন ত্বোহা
কলাম লেখক
শিক্ষার্থীআল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইল- tohaarafat1998@gmail.com



Comments